দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল, বাস্তব বলছে অন্য কথা

বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই এ নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল। এমনকি অনেক গণমাধ্যমকেও বিভ্রান্তিমূলক ওই প্রচারণায় শামিল হতে দেখা যাচ্ছে।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন। ওইদিন থেকে বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে—যার মূল অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং র‌্যাম্পসহ ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই অংশে মোট ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে ১৩টি র‌্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ফলে ওইদিন থেকেই মোট ১৩টি জায়গা দিয়ে ওঠা বা নামা যাবে।

অপপ্রচার, নাকি মগজ ধোলাই?

কেউ বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে বড়লোকের রাস্তা। কেউ বা হতাশা প্রকাশ করছেন, সেখানে মোটরসাইকেল কেন চলবে না? এতোদিন পর কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ আবার মতামত দিচ্ছেন— বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়ক ‘খুব ভালো’, সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অপ্রয়োজনীয়। আবার পরিবেশ সমিতির কর্তারা বলছেন, হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে গেলে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। অনেক গণমাধ্যম আবার পুরনো প্রস্তাবিত টোল হার প্রচার করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

মেট্রোরেলের বেলায়ও ঘটেছিল একই কাণ্ড। তখনও দেখা গিয়েছিল নানা মুনির নানা মত। পরিবেশের বিপর্যয় নিয়ে নানা হতাশা-নিরাশা। শেষমেশ সব অপপ্রচারই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটছে। রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটে যখন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ, তখন কোনো বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নাকি ‘অপ্রয়োজনীয়’। পরিবেশ সমিতির কর্তারা যখন হা-হুতাশ করছেন হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে গেলে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হবে, পরিবেশ নষ্ট হবে— তখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই অহেতুক।

কেউ কেউ বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে ‘বড়লোকের রাস্তা’। অথচ প্রকৃতপক্ষে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে সাধারণ মানুষ। কারণ যেকোনো স্বল্প-স্টপেজের বাস এই রুটে চলবে, যা মূলত সাধারণ মানুষই ব্যবহার করে থাকে।

অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সেখানে মোটরসাইকেল কেন চলবে না? অথচ বাস্তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলবে অনেক গতিতে। এমন একটি এক্সপ্রেসওয়েতে মন্থরগতির সিএনজি বা মোটরসাইকেল না চলাটাই স্বাভাবিক।

এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পরও কোনো কোনো গণমাধ্যম আবার ‘ভাইরাল’ হওয়ার বাসনায় পুরনো প্রস্তাবিত টোলের হার প্রচার করে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার উদ্দেশ্য যাদের নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত প্রয়োজন তাদের জন্য। রপ্তানিমুখী ট্রাকগুলো গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যেন নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে এই উদ্দেশ্যে এটি করা। পাশাপাশি নগরীর ভেতরে যারা দ্রুত যেতে চান, তারা ব্যবহার করবেন। তাদের জন্য বিমানবন্দর, ফার্মগেট সহ কয়েকটি ওঠানামার জায়গা রাখা হয়েছে।

কেন এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের মহাসড়কগুলো একটানা চলাচলের উপযোগী নয়। রয়েছে অসংখ্য মোড় আর হাটবাজার। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশের কয়েকটি মহাসড়কে করা হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে। এর প্রথমটি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। এই এক্সপ্রেসওয়েটি গ্রাউন্ডে, অর্থাৎ মাটির ওপর। অন্যদিকে বিমানবন্দর-কুতুবখালী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েটি এলিভেটেড। এক্সপ্রেসওয়েতে সব ধরনের যানবাহন চলবে না, দ্রুতগতির যানবাহন চলবে। যানবাহন চলবে একটি নির্দিষ্ট গতিতে। যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ের কোথাও থামবে না। থামতে হলে ব্যবহার করতে হবে নির্দিষ্ট লেন, যা মূল এক্সপ্রেসওয়ের বাইরে। একে বলা হচ্ছে র‌্যাম্প। বিশেষ করে, গাজীপুর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরগামী রপ্তানিমুখী পণ্যপরিবাহী গাড়ি যাতে ঢাকার জ্যামে আটকে না থেকে দ্রুত বন্দরে পৌঁছে যেতে পারে, সেজন্য বিজিএমইএসহ রপ্তানি-ব্যবসায়ীরা এ ধরনের একটি এক্সপ্রেসওয়ের দাবি করেছিলেন।
এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নিতে যানবাহন কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জানা-অজানা

ঢাকা শহরের যানজট কমানোর লক্ষ্যে বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর রুট হলো—
কাওলা-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী। মূল এলিভেটেড অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার।
এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মোট ৩১টি র‍্যাম্প রয়েছে। র‌্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে— থাইল্যান্ডভিত্তিক ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (৫১%), চায়না স্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এন্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪%) এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড (১৫%)।

খরচ বাড়লো যে কারণে

এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। এই নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ মূলত নকশা পরিবর্তন। প্রথম নকশায় হাতিরঝিলের ওপর দিয়েই এটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে নকশা করা হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। এছাড়া পান্থকুঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে র‍্যাম্প ও পিলার নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আপত্তির কারণে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ থমকে যায়। কাজ থমকে থাকলেও মেইনট্যানেন্স খরচ অব্যাহত থাকে।

প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২৭% বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। এর পরিমাণ ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৪৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ চায়নার (আইসিবিসি) সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ মোট ৮৬১ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে। ইতিমধ্যে মোট ৩৮২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ইউএস ডলার ছাড় হয়েছে।

টোল দিতে হবে যতো টাকা

বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত অংশে চলাচল এই পথে চলাচলের যানবাহনগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে টোল নির্ধারণ করেছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৯ আগস্ট সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই টোলের হার ঘোষণা করেন।
• শ্রেণি-১: প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি, জিপ, ‘স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল’, ১৬ সিটের কম মাইক্রোবাস এবং তিন টনের কম হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে টোল ৮০ টাকা।
• শ্রেণি-২: ছয় চাকা পর্যন্ত মাঝারি ট্রাকের টোল ৩২০ টাকা।
• শ্রেণি-৩: ছয় চাকার বেশি ট্রাকের জন্য টোল ৪০০ টাকা।
• শ্রেণি-৪: ১৬ বা তার বেশি আসনের সব ধরনের বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কি ‘বড়লোকের রাস্তা’?

যাদের নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত প্রয়োজন, তাদের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হয়েছে। রপ্তানিমুখী ট্রাকগুলো গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার ভেতরে দ্রুত চলাচল করতেও এই পথ ব্যবহার করার জন্য বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ওঠানামার মোট ৩১টি জায়গা রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ওঠানামার জায়গা (র‌্যাম্প) মোট ১৫টি। শুরুতেই এর ১৩টি খুলে দেওয়া হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যেহেতু বাস চলবে, সেই বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা। যেকোনো স্বল্প-স্টপেজ বাস এই রুটে চলতে পারে। চাইলে কোনো বাস বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফার্মগেট/তেজগাঁও চলে আসতে পারে। বলাকা পরিবহনের মতো বেশ কয়েকটি বাস কোম্পানি এমন স্বল্প-স্টপেজ সার্ভিস দেয়। সাধারণ মানুষ এই বাসে করে এই রুটের সুবিধা নিতে পারবে। আবার চাইলে র‌্যাম্প ব্যবহার করে বাসগুলো সুবিধামতো স্টপেজেও থামাতে পারবে।

কেন চলবে না মোটরসাইকেল

দুর্ঘটনার ঝুঁকি শূন্যে নিয়ে আসতে উচ্চগতির যানবাহনের জন্য নির্ধারিত এই পথে স্বল্পগতির বাহন যেকোনো থ্রি হুইলারের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মতো বাহনের চলাচল আপাতত নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। পদ্মা সেতুতেও কিছু সময়ের জন্য মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ ছিল। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল অনুমোদিত। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশেই এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ। এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও সবগুলো এক্সপ্রেসওয়েতেও স্কুটার এবং মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলবে না—এই নীতিটিই যেখানে সাধারণ হওয়ার কথা। সেখানে মোটরসাইকেল কেন চলবে না—এই প্রশ্নটি এনে পুরো বিষয়টিকেই হালকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে কোনো কোনো মহল থেকে। একইভাবে পথচারীরাও কেন এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে না—এমন হাস্যকর প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ।

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট—যানজট আছে নাকি নেই?

বুয়েটের অধ্যাপক প্রকৌশলী শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন মন্তব্য করেছেন, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়ক ‘খুব ভালো’, এখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অপ্রয়োজনীয়। এ মুহূর্তে এটা কোনো কাজেই আসবে না। অনেকে আবার বলছেন, ফার্মগেটে গাড়িগুলো নামলে ফার্মগেটে আরো বেশি যানজট সৃষ্টি হবে। অথচ অধ্যাপক শামসুল হক নিজেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের একজন ডিজাইনার।

কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, সত্যিই কি ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে কোনো যানজট নেই? কিন্তু বাস্তব অবস্থা হল, প্রতিনিয়তই রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। বিজয় সরণীর মোড়ের যানজট থেকে শুরু করে মহাখালী, সৈনিক ক্লাব, কাকলী, নিকুঞ্জ ইত্যাদি এলাকার তীব্র যানজটের বিষয়টি বারবার গণমাধ্যমে এসেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র থেকে উত্তরাগামী যানবাহনগুলো সরাসরি চলে যেতে পারবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এয়ারপোর্ট রোডে যানজট বলে কিছুই থাকবে না। দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষায় থেকে সময় নষ্ট আর যানবাহন থেকে বায়ুদূষণের অবসান হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত হওয়ায় তা ফার্মগেটে যানজট বাড়াবে— এমন একটি প্রচারণাও ছড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবে ফার্মগেট সংলগ্ন বিজ্ঞান কলেজ থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ল্যান্ডিং, যা কোনোভাবেই ফার্মগেট মোড়ে জ্যাম সৃষ্টি করবে না। কারণ এই স্থাপনা তৈরিই হয়েছে ঢাকার যানজট কমানোর জন্য।

স্ববিরোধিতার রকম-সকম

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নকশাকারদের অন্যতম হলেন— স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং ড. শামসুল হক। এর মধ্যে ইকবাল হাবিব বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন—বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক। হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে গেলে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হবে, পরিবেশ নষ্ট হবে—এমন অভিযোগ তোলে বাপা। যদিও পরে সেই নকশা পরিবর্তন করা হয়। অথচ বাপা’র একজন শীর্ষ নেতাই এ প্রকল্পের ডিজাইনার।

অন্যদিকে পান্থকুঞ্জে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নামানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ হলেও বুয়েটের অধ্যাপক প্রকৌশলী শামসুল হক নিজেই এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের একজন ডিজাইনার। চলতি বছরের ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনিই ২০২০ সালের নকশা অনুসারেএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কেমন লাভ হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন কোনো হিসেব করা হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, ঢাকায় প্রতি বছর যানজটে ১ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এই ক্ষতির অন্তত ১০ শতাংশ কমাবে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে কোনো অর্থনীতিবিদ এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করেননি।

পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে যেভাবে অপেক্ষা করতে হয় এবং অনেক সময় পঁচনশীল দ্রব্য ঝুঁকিতে পড়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ায় সেই পরিস্থিতি থাকবে না। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে, যার অর্থনৈতিক মূল্য আছে। সময়, ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তা কমে যাবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!