ঘ্রাণে বোঝার উপায় নেই কোনটি আসল আর কোনটি নকল ঘি। ডালডা, পাম অয়েল, নারিকেল তেল, ফ্লেভার, রং তার সাথে সামান্য পরিমাণে ঘি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি! এসব ঘি বাহারি নাম দিয়ে কৌটাজাত করা হচ্ছে। এরপর বিএসটিআইয়ের নকল সিল বসিয়ে অবাধে বাজারজাত করা হচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে।
জানা যায়, অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে ঘিয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি অসাধু চক্র ভেজাল ঘি তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে। আর এসব ভেজাল ঘিতে সয়লাব আনোয়ারার অধিকাংশ বাজার। দোকানিরাও এসবকে খাঁটি গাওয়া ঘি হিসেবে ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে দোকানিরা আর্থিকভাবে লাভবান অন্যদিকে ঠকছে সাধারণ মানুষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজার, আনোয়ারা সদর, কাফকো বন্দর সেন্টার, বটতলী রুস্তম হাট, জুঁইদন্ডী চৌমুহনী, তৈলারদ্বীপ সরকারহাট, ভিংরোল ছত্তারহাট, মালঘর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে মুদির দোকানগুলোতে সুদৃশ্য কৌটায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব ভেজাল ঘি। আবার প্রকারভেদে এসব ঘি উচ্চ মূল্যেও বিক্রি করতে দেখা যায়। ডালডা আর পাম ওয়েল আবার কোন কোনটাতে পাওয়া যায় নারিকেল তেলের গন্ধ। কোন কোন ঘিয়ের কৌটার লেবেলে বিএসটিআইয়ের সিল নকল করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি অসাধু চক্র এসব ভেজাল ঘি ক্রেতাদের ধরিয়ে দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুদি দোকানি বলেন, রমজান মাসে ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। এ সুযোগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘিয়ের পাশাপাশি নিম্নমানের ঘিও বিক্রি করে। কম মূল্যে এসব ঘি কিনে নেন।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডানুফা ঘিয়ের স্বত্বাধিকারী মাহামুদ তাহের বলেন, আমাদের কারখানার সব কাগজপত্র ঠিক আছে। আমাদের বিএসটিআইয়ের অনুমোদনও আছে।
এ ব্যাপারে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আবু তালেব বলেন, ‘রূপসা ও কর্ণফুলী ব্র্যান্ডের কারখানা গত বছর রমজানে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করা হয়েছিল। এখনো ওইসব ঘিসহ নকল ও ভেজাল এবং অনুমোদনহীন কিছু ঘি বাজারে দেখা যাচ্ছে। সে সবের বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে কৌটায় উল্লেখিত ঠিকানায় গিয়ে ঘি কারখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ইউএনও স্যারের নির্দেশে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে রূপসা ‘ঘি’র স্বত্বাধিকারী তাজউদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘পুরো রমজান মাস জুড়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ভেজাল ঘি বিরোধী অভিযান চালানো হবে। যেখানেই ভেজাল নিত্য পণ্য পাওয়া যাবে সাথে সাথে জব্দ ও জরিমানা করা হবে।