জালিয়াতি বাড়ছে বন্ড সুবিধার আড়াল নিয়ে, ৬ মাসে ধরা শতাধিক প্রতিষ্ঠান

বন্ড সুবিধা থাকলে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনলে তাতে শুল্ক ও কর দিতে হয় না। এর সুযোগ নিয়ে গত ৬ মাসে অন্তত শতাধিক প্রতিষ্ঠান ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য ও বেশি শুল্কের পণ্যকে কম শুল্কের পণ্য হিসেবে খালাস করিয়ে নিতে চেয়েছে। বন্ড সুবিধার যোগ্য নয়— এমন পণ্য এনেও খালাসের চেষ্টা হয়েছে বহুবার। এই সবকিছুরই লক্ষ্য একটিই—শুল্ক ফাঁকি দেওয়া।

ঢাকার প্রতিষ্ঠান হাইপয়েড কম্পোজিট নিট লিমিটেড বন্ড সুবিধা ব্যবহার করে গার্মেন্টস পণ্যের বদলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এনেছিল অন্য পণ্য। ঘটনা ধরা পড়ার পর গত বছরের ২৭ অক্টোবর সাভারের দক্ষিণ কৃষ্ণপুরের এই প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাই দিতে হয়েছে ৮১ লাখ টাকা।

এভাবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের বন্ড সুবিধার একটি শাখা দিয়ে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করেছে। অপর একটি শাখা দিয়ে আরও ২৫টি প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণায় অন্য পণ্য এনে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছে। তবে ধরা পড়ার পর কাস্টমসের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা দিতে হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।

কাস্টমস সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, গত ৬ মাসে অন্তত শতাধিক প্রতিষ্ঠান ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য ও বেশি শুল্কের পণ্যকে কম শুল্কের পণ্য হিসেবে খালাস করিয়ে নিতে চেয়েছে। বন্ড সুবিধার যোগ্য নয়— এমন পণ্য এনেও খালাসের চেষ্টা হয়েছে বহুবার। এই সবকিছুরই লক্ষ্য একটিই—শুল্ক ফাঁকি দেওয়া।

গত বছরের অক্টোবর মাসে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ৮১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয় হাইপয়েড কম্পোজিট নিট লিমিটেড । একই মাসে সবচেয়ে ছোট অংকের ১ লাখ টাকা জরিমানা গোণে গাজীপুর জয়দেবপুরের প্রতিষ্ঠান ক্রাউন উল ওয়ার লিমিটেড।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন নীতিমালায় শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় দ্বিগুণ জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে শুল্ক ফাঁকির টাকাসহ তিনগুণ টাকা জমা দিতে হয় জরিমানা হিসেবে। এর ওপর কাস্টমসের কমিশনার ইচ্ছে করলে ব্যক্তিগত জরিমানাও করতে পারেন— যা পরিশোধ করতে বাধ্য ওই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের শুল্কায়ন শাখা-৮সি-তে বন্ড সুবিধায় অতিরিক্ত পণ্য এনে চালান খালাসের চেষ্টায় ধরা পড়ে জরিমানা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে— এ কেএইচ নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, গোল্ড স্টার লেবেলস এবং অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, ইমপ্রেস-নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, ক্রাউন উল ওয়্যার লিমিটেড, ডিভাইন ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড, জেবিএস প্যাকেজিং, আর্গন ডেনিমস লিমিটেড, বাংলাদেশ রফতানি আমদানি কো. লিমিটেড, এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল লিমিটেড, কেসি ওয়াশিং প্ল্যান্ট, ইউরোটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড, নিট এশিয়া লিমিটেড ইউনিট-২, বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইভিন্স টেক্সটাইল লিমিটেড, এসিএস টেক্সটাইল (বাংলাদেশ) লিমিটেড, ইমপ্রেস-নিউটেক্স কমপোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, ক্রাউন উল ওয়ার লি, আলেমা টেক্সটাইল লিমিটেড, হামস গার্মেন্টস লিমিটেড, হামজা টেক্সটাইল লিমিটেড, আল-মুসলিম ওয়াশিং লিমিটেড, আরাফাহ নিট কম্পোজিট লিমিটেড, আল-মদিনা ট্যানারি, হাইপয়েড কম্পোজিট নিট লিমিটেড, বেঙ্গল লেবেল এন্ড অ্যাক্সেসরিজ লিমিটেড, আবির ফ্যাশনস।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমসের শুল্কায়ন শাখা ৮ডি-তে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে জরিমানা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে— তুসুকা প্রসেসিং লিমিটেড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড, ট্রফিক্যাল নিটেক্স লিমিটেড, মন্ডল ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড, রাইডার লেদার ব্যাগ এবং লাগেজের ফ্যাক্ট লিমিটেড, ইউনিকম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, এম এম নিটওয়্যার লিমিটেড, ট্রপিক্যাল নিটেক্স লিমিটেড, মিথেলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মন্ডল ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড, ইউনাইটেড সার্জিকাল লিমিটেড, টেক্স টাউন লিমিটেড, এমএস প্রাইম লেবেল এন্ড অ্যাক্সসরিজ, নাভানা পলি প্যাকেজিং লিমিটেড, রহিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, রয়েল ফুটওয়্যার লিমিটেড, ইউনিটি কম্পোজিট মিলস (প্রা) লিমিটেড, এন জেড ডেনিম লিমিটেড, রাইজিং ফ্যাশন অ্যাক্সেসরিজ লিমিটেড, টি অ্যান্ড এম ইন্টারলাইনিং এমএফজি কো লিমিটেড, এনআরজি কম্পোজিট ইয়ান ডাইং, নিস কটন লিমিটেড (দুই চালানে জরিমানা দিতে হয়েছে), জেড অ্যান্ড এম ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, সিম ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গত ৬ মাসে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কাস্টমস সব সময় সজাগ রয়েছে যাতে সরকারে রাজস্ব কেউ যেন ফাঁকি দিতে না পারে। তাই এতোগুলো টাকা জরিমানা আদায় করতে সক্ষম হয়েছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!