‘এই ওরে ছুরি মারি দে’— চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা সাদ্দামের এমন নির্দেশের পরই হামলে পড়ে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক। কিছু বুঝে উঠার আগেই বেদম মারধর শুরু করে তারা। একজন তো একটা ছুরি বের করে পেটে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলো। ভাগ্যে ভালো ছিলো লাগেনি’— এভাবেই নিজের ওপর হামলার বর্ণনা দিচ্ছিলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ ক্যামেরাপারসন সেলিম উল্লাহ। চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং এলাকায় চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় তিন নেতার অনুসারীরা। আর সেই সংঘর্ষের ভিডিও ধারণের সময় হামলার শিকার হন ওই ক্যামেরাপারসন।
রোববার (২০ এপ্রিল) রাত সোয়া দশটার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
রোববার (২১ এপ্রিল) রাত সোয়া ১০টার দিকে ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকার মসজিদের সামনে ডিবি অফিসের পাশে এই ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় সেলিমকে। তার চোখে এবং পায়ের লিগামেন্টে আঘাত লেগেছে। পরে ক্যামেরাপারসন সেলিম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এই ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. ফখরুল ইসলাম (২৩), ইরফান (২০), মাহিন (২৫), জুবায়েদ আলী (১৯), মো. মোসাদ্দেক হোসেন (১৯), মো. রফিক (৩৫) ও বিল্লাল বেপারি (২৮)। তবে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি হামলার নির্দেশদাতা যুবলীগ নেতা মো. সাদ্দামকে (৩৫)। জানা গেছে, সাদ্দামের বড় ভাই ডবলমুরিং থানা পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করে।
ঘটনার বিষয়ে হামলার শিকার সেলিম জানান, ‘কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় মনসুরাবাদ এলাকায় দেখি চরম মারামারি হচ্ছে। ঘটনা দেখে আমি আমার মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করতে থাকি। আমাকে দেখে সাদ্দাম তার অনুসারীদের আমাকে ছুরি মারার নির্দেশ দেন এবং আমার মোবাইলটি ভেঙ্গে ফেলতে বলেন। তার নির্দেশের সাথে সাথেই সবাই হামলে পড়ে আমার ওপর।’
হামলার শিকার সেলিমের ভাষ্য অনুযায়ী, এ সময় মারতে মারতে তাকে নিয়ে যায় পাশের একটি খালি জায়গায়। সেখানে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালাগালির একপর্যায়ে সেলিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়দের তৎপরতার মুখে পিছু হটে সাদ্দাম বাহিনীর সদস্যরা। ফলে প্রাণে রক্ষা পান সেলিম।
সেলিম বলেন, ‘আমি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও ওরা থামেনি। আমি যে মোবাইলে ভিডিও করেছি সেটা নিয়ে লাঠি দিয়ে ভেঙ্গেছে। পকেটে থাকা টাকাগুলোও হাতিয়ে নিয়ে গেছে।’
জানা গেছে, নগরীর মনসুরাবাদ এলাকার ফুটপাতে অবৈধ ফার্নিচার মার্কেট গড়ে তোলা সাদ্দাম কিশোর গ্যাংয়ের লিডার বলে জানান স্থানীয়রা। শুধু ফুটপাত নয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিশাল জায়গা দখলে নিয়ে সাদ্দাম গড়ে তুলেছেন ফার্নিচারের গোডাউন। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পান স্থানীয়রা। এসব সন্ত্রাসীর দাপটের কাছে অসহায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। প্রতিবাদ তো দূরের কথা, উল্টো ভয়ে থাকেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যুবলীগ নেতা সাদ্দাম আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে থাকে।
মামলার বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের পাটোয়ারী বলেন, ‘এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতে তোলা হচ্ছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
বিএস