ছাত্রলীগ সভাপতিকে ইয়াবা গুঁজে দিয়ে পিটিয়ে পুলিশে দিলেন যুবলীগ নেতা, মামলার সঙ্গে ঘটনার মিলই নেই

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের এক নেতা ও যুবলীগের এক কর্মীকে ইয়াবা সেবনের পরিকল্পিত অভিযোগ এনে বেদম মারধর করে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়েছে। এক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে এভাবে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও সেই ঘটনা আড়াল করে পুলিশ বাদি হয়ে ওই দুজনের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করেছে। মূলত একটি মৎস্য প্রকল্পে আধিপত্য বিস্তারে বাধা দেওয়ায় সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগ নেতা রাকিব জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এর মধ্যে একজনকে জাহাঙ্গীর নিজেই বেধড়ক পেটান।

রোববার (২৭ আগস্ট) রাত নয়টার দিকে সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মারধরে আহত ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর চিকিৎসার জন্য সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও এই বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি পুলিশের দায়ের করা মামলায়।

এমন ঘটনার শিকার দুইজন হলেন সাউথ সন্দ্বীপ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব হাসান ওরফে সাগর এবং তার বন্ধু সারিকাইত ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী মেহেদী হাসান।

ঘটনাস্থলে থাকা মগধরা ইউনিয়ন পরিষদের একজন চৌকিদার নাম প্রকাশ করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর মেম্বার কল করে দফাদারের মাধ্যমে আমাদের ডেকেছিলেন। তিনি সাত নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার। ঘটনাস্থল আট নম্বর ওয়ার্ডে। আমরা গিয়ে দেখি পেলিশ্যারহাট, শিবেরহাট, নোয়াহাট, ষোলশহর সহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক ছেলেপেলে সেখানে জড়ো হয়েছে। সাগররা ছয় জন ছিল। এর মধ্যে দুজনকে আটকে তারা মারধর করে। বাকি চারজনকে ছেড়ে দেয়। আমরা আটকানোর চেষ্টা করেছি। পরে পুলিশ আসলে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

সাগরকে মারধরের কিছু ভিডিও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে। তবে পুলিশের করা মামলায় এসবের কিছুই উল্লেখ নেই। পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ইয়াবা সেবনরত অবস্থায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

কিন্তু ছাত্রলীগ নেতার ভাইয়ের দাবি, একটি মৎস্য প্রকল্পে আধিপত্য বিস্তারে বাধা দেওয়ায় সজীব হাসানকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছেন মগধরা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ রাকিব জাহাঙ্গীর। ওই ইউপি সদস্য ৩০-৪০ জন লোক নিয়ে এসে তার ভাইকে পিটিয়েছেন।

সজীব হাসানের ভাই ঈশান মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মগধরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সজীব ও তাঁর বন্ধু মেহেদী হাসানের মাছের একটি প্রকল্প আছে। সেখানে ইউপি সদস্য রাকিব জাহাঙ্গীরের অনুসারী মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় মোশারফ সেখানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করলে সজীব ও মেহেদী বাধা দেন। এরপর রাত নয়টার দিকে মেহেদী মৎস্য প্রকল্পে ভেসে ওঠা কিছু মরা মাছ পুকুর থেকে তোলার কাজ করছিলেন। আর সজীব পুকুরপাড়ে বসে মুঠোফোনে ফেসবুক ব্যবহার করছিলেন। এ সময় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর ৩০ থেকে ৪০ জন লোক নিয়ে এসে তাঁর ওপর হামলা চালান। জাহাঙ্গীর নিজেই সজীবকে বেধড়ক পেটান।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা সন্দ্বীপ থানার উপ-পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এজাহারের কথাই আমাদের বক্তব্য।’

সাউথ সন্দ্বীপ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাগরকে কারা মারধর করলো, সেখানে শতাধিক মানুষ কী করছিল— এসব প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব তদন্তে উঠে আসবে। মামলা করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ রাকিব জাহাঙ্গীরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান সুমন বলেন, ‘এটা একটা ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত আশা করি।’

সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সামীউদ্দৌলা বলেন, ‘এটি খুব দুঃখজনক একটা ঘটনা। মামলার বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনার কোন মিল নেই। ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে এমন কিছু করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানাই। বিষয়টার সুষ্ঠু তদন্ত আশা করি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!