পুলিশ-ইয়াবা ব্যবসায়ীর কারসাজিতে সাজানো নাটকের শিকার গৃহবধূ
স্বামী ইয়াবার ব্যবসা ছেড়ে দেওয়াই হয়েছে কাল
এককালে ইয়াবা ব্যবসা করতেন। পরিবারের চাপে ওই ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার চরম মূল্য দিতে হল কামরুজ্জামান কামরুলকে। যে কারবারির ইয়াবা বিক্রি করতেন, ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ায় সেই কারবারিই ক্ষুব্ধ হয়ে কামরুলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ইয়াবাসহ কামরুলের স্ত্রীকে তুলে দেন পুলিশের হাতে। স্বামীর ওপর ক্ষোভের জেরে ওই গৃহবধূকে সাজিয়ে দেওয়া হয় ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ইয়াবাসহ দুই নারী-পুরুষকে আটকের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
শনিবার (১০ অক্টোবর) রাত নয়টায় উপজেলার মগধরা চার নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ মাঝির বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। আটক দুজন হলেন ওই বাড়ির কামরুজ্জামান কামরুলের স্ত্রী নাদিয়া সুলতানা (২৬) ও একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে নুর উদ্দীন বাহার (৩৮)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামান কামরু এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীত ওরফে রাকিবের ইয়াবা বিক্রি করতেন তিনি। সম্প্রতি তিনি জাহাঙ্গীরের ইয়াবা বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় জাহাঙ্গীর পুলিশ দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এমনকি ভিন্ন এলাকার বাসিন্দা হওয়ার পরও অভিযানের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আমাকে আগে অনেকবার ইয়ে করছে যে আমি তার থেকে মালগুলো (ইয়াবা) আনি বেচি। আমি রাজি হই নাই। আমি বললাম যে, দেখ ভাই আমি এগুলো থেকে একবার ভোগান্তি সয়ে আসছি। যেহেতু আমার কাজের ফল আমি পাইছি। তাহলে আমি নতুন করে আর এগুলোতে যাইতে চাই না। আমাকে অফারটা দেওয়ার পরে আমি এই কথাটাই বলছিলাম তারে। ২৫-২৬ দিন আগেও এই অফারটা দিছিল আমাকে।’
এদিকে কামরুজ্জামানের স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার এসআই জুলফিকার আগে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘ওই বাড়িতে ইয়াবা সেবনের আসর বসানোর খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে ২৭০ পিস ইয়াবাসহ দুজনকে আটক করতে সক্ষম হই। তবে নাদিয়ার স্বামী কামরুজ্জামান কামরুল পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।’
পুলিশের এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে কোল্ড স্টোরেজের ব্যবসা শুরু করেছি। আমার সাথে আরও দুজন পার্টনার আছে। গতকাল সন্ধ্যায় বসে আমরা সেই ব্যবসার হিসেব নিয়ে আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার ঘরের দরজায় এলোপাতাড়ি বাড়ি দিচ্ছে জাহাঙ্গীর সহ কয়েকজন। তখন বিপদ আঁচ করতে পেরে আমি পালিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর তারা পুলিশ ডেকে আমার স্ত্রীকে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে তুলে দেয়।’
পুলিশি অভিযানে জাহাঙ্গীরের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ থানার এসআই জুলফিকার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলেন, ‘না আমি এসব কোন কিছু জানি না। কে ছিল না ছিল এসব জানি না। আমি অভিযানে গেছি। ইয়াবাসহ আসামি গ্রেপ্তার করছি। কে ছিল না ছিল এটা আমার দেখার বিষয় না।’
অন্যদিকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় পরিচিত জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পুলিশ যখন ওই মহিলাকে ইয়াবাসহ পেল, তখন সেই মহিলা নাকি খুব ঝামেলা করছিল। এজন্য সন্দ্বীপ থানার তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে ফোন করেন। আমি সেখানে যাই।’
এছাড়া কামরুল আগে তার থেকে ইয়াবা নিয়ে বিক্রি করতেন কিংবা ইয়াবা বিক্রির জন্য কামরুলকে দেওয়া অফারের কথাও অস্বীকার করেছেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাকিব।
সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আর স্থানীয় মেম্বার মিলাদ হোসাইন পুলিশের পরে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। তারা দুজন একসাথে ঘটনাস্থলে যান।’
তবে এই বিষয়ে স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মিলাদ জানান, ‘আমি জাহাঙ্গীরের সাথে স্পটে যাইনি। আমি যাওয়ার অনেক আগে জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলে গিয়েছে।’
এআরটি/সিপি