চবিতে ছাত্রদল আছে নামমাত্র, বিয়ে-চাকরির চক্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই ধুঁকছে

কর্মীদের হতাশা কাটাতে ঢাকা থেকে নতুন কমিটির সান্ত্বনা

দুই বছরের জন্য গঠন করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৪ বছর আগে। বর্তমানে কমিটির অধিকাংশ সদস্যই নিষ্ক্রিয়। তাদের মধ্যে অনেকে বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। আবার অনেকে করছেন ফুলটাইম চাকরিও। এমন অবস্থায় কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থানই নেই ছাত্রদলের। দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় হতাশ কর্মীরাও। অন্যদিকে বছরের পর বছর পদে থেকেও বিব্রত নেতারা।

শাখা ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর দুই বছরের জন্য শাখা ছাত্রদলের ৬৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি করা হয় ইতিহাস বিভাগের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের খোরশেদ আলমকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শহীদুল ইসলামকে। পরে ২০১৭ সালের ১৮ মে ২৪৩ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ।

ক্যাম্পাসে অবস্থান নেই, হতাশ নেতাকর্মীরা

এদিকে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির ৬ বছর পূর্ণ হলেও ক্যাম্পাসে বড় পরিসরে কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। কমিটি গঠনের পর মাঝেমধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হলেও গত দুই বছর ধরে ক্যাম্পাসে তাদের কোন কর্মসূচি চোখে পড়েনি। এতে অনেকটা হতাশ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ ২০২০ সালে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন নেতা আহত হন। মূলত এরপর থেকে ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে আর কোন কর্মসূচি পালিত হয়নি। যদিও ভর্তি পরীক্ষার সময় শুভেচ্ছা জানানো, ঢাবি ছাত্রদলের ওপর হামলার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেছেন সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে কিছু ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

দীর্ঘদিন পর গত ৩০ মে ক্যাম্পাসে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে সেই মিছিল ছাত্র সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। তবে এরপর তাদের আর কোন নড়াচড়া দেখা যায়নি।

শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন্দ্রঘোষিত যেকোনো কর্মসূচি পালন, জাতীয় ইস্যু ও ছাত্রবান্ধব দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য দ্রুত আমাদের নতুন কমিটি দরকার। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রদলের ব্যানারে দলের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ছাত্রদের বৃহৎ পরিসরে সম্পৃক্ত করতে নতুন কমিটির কোন বিকল্প নেই।’

নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী শাখা ছাত্রদলকর্মী ফরহাদ হোসেন আসিফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চবিতে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষ্ক্রিয়। এতে আমরা চরম মাত্রায় হতাশ। নিষ্ক্রিয় হওয়ার একটাই কারণ, বর্তমান নেতাদের প্রায় সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে। তাই নতুন কমিটি হওয়া শুধু আমার দাবি না, ছাত্রদলের প্রতিটি কর্মীর প্রাণের দাবি।’

পদ নিয়ে বিব্রত বর্তমান কমিটির নেতারাও

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বেশিরভাগই বিয়ে করে ফেলেছেন। অনেকে যোগ দিয়েছেন সার্বক্ষণিক চাকরিতে। আবার অনেকে ছাত্রজীবন শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন আগেই। তবুও কমিটিতে তাদের পদ থাকায় বিব্রতবোধ করছেন তাদের অনেকে। খোদ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত এক ডজন নেতা বিব্রতবোধ করার বিষয়টি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘নতুন কমিটি গঠনের জন্য আমরা কয়েকবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে বলেছি। ২০২০ সালে নতুন কমিটি গঠনের জন্য একটি কর্মীসভাও হয়েছে। তবুও নতুন কমিটি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় আমরা পদে থেকেও বিব্রতবোধ করছি।’

সভাপতির সাথে সুর মিলিয়ে সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নতুন কমিটি হওয়া উচিত। ২ বছরের কমিটি ৬ বছর চলতে পারে না। একজন শিক্ষার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরও শেষ হয়ে যায় পাঁচ বছরে।’

তবে বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে দুইজনই বিষয়টি এড়িয়ে যান।

কমিটি চান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও

নতুন কমিটি গঠনের দাবি যে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের তা নয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলে নতুন নেতৃত্ব চান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চবি ছাত্রদলের কমিটির জন্য কেন্দ্রকে বেশ কয়েকবার বলেছিলাম। বিভিন্ন কারণে কমিটি গঠন করা হয়নি। সামনে আমাদের অনেক আন্দোলন সংগ্রাম আছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কমিটি দরকার। আমরা আবারও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে বলবো।’

সান্ত্বনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল

নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। শিগগিরই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।’

একই সুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলও বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমাবেশ শেষে আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বসবো৷ শিগগিরই নতুন কমিটি করার পরিকল্পনা আছে।’

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!