চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের আশপাশ গিলে খাচ্ছে অবৈধ দখলদার

সচিবের আগমনে স্টেশনের ভেতর সাজাতেই ব্যস্ত কর্মকর্তারা

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের আশপাশে অবৈধ দখল বাণিজ্য বেড়েই চলেছে। নতুন স্টেশন থেকে পুরাতন স্টেশন পর্যন্ত রেলের কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদ বেদখল হয়ে রয়েছে। সেসব জায়গায় আবার ঝুলছে দোকান ভাড়া দেওয়ার সাইনবোর্ড। একইসঙ্গে নিত্যনতুন গজিয়ে ওঠা অসংখ্য সংগঠনের নামে সাইনবোর্ড তুলেও দখলে নেওয়া হয়েছে রেলের জায়গা। এসব জায়গায় রাত হলে মাদকাসক্ত ও জুয়ার আসর বসে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের আশপাশ গিলে খাচ্ছে অবৈধ দখলদার 1

শুক্রবার (২৭ মে) তিনদিনের চট্টগ্রাম সফরে এসেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ূন কবির। সচিবের আগমন উপলক্ষে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। স্টেশনের ভেতরে একদম ঝকঝকে করা হচ্ছে। ভেতরের পরিবেশ পরিবর্তন করলেও বাইরে সেই আগের মতোই অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য দেখা গেছে। এ যেন ‘ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’র মতোই অবস্থা।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ভেতরে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে পুরোদমে। কয়েক ঘণ্টা পরপর কর্মকর্তারা যাচ্ছেন কাজের তদারকি করতে। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে স্টেশনের বাইরে। রেলের জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা হোটেল, রেল শ্রমিক লীগ, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদসহ অসংখ্য নামের সাইনবোর্ড ঝুলছে। পুরাতন স্টেশনে বাইরে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’ নামের বিশাল অফিস রয়েছে। এই অফিসের ভেতরে ফ্রেশ পানির গুদাম,পাশের একটি রুমে বসে জুয়ার আসর। মুক্তিযোদ্ধা হোটেলে চলছে বেচাকেনা। এছাড়া সামনে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে নতুন দোকান। সেখানে লেখা আছে ‘ভাড়া দেওয়া হইবে। যোগাযোগ : ০১৯১১-৭৯৮৮৭৯’।

পুরাতন স্টেশন থেকে নতুন স্টেশন পর্যন্ত আরও রয়েছে ‘রেল শ্রমিক লীগ’ নামের একটি সংগঠনের অফিস। সংগঠনের সাইনবোর্ডটি দেওয়া হয়েছে কামাল পারভেজ বাদল নামের এক ব্যক্তিরে সৌজন্যে।

এছাড়া পাশেই রয়েছে ‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ’ নামের আরেকটি সংগঠনের অফিস। এটি জুয়েল হোসেন নামের এক ব্যক্তির সৌজন্যে। তবে এখানে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে বলে জানা গেছে।

পাহাড়তলী রেলওয়ে ভূসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, হোটেল, রেল শ্রমিক লীগ, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদসহ আশপাশে গড়ে ওঠা এইসব স্থাপনার কোনো লিজ বা চুক্তি নেই। এগুলো সব অবৈধ। প্রায়সময় ভূসম্পদ দপ্তর উচ্ছেদ অভিযান চালালেও আঁচ লাগেনি এসব অবৈধ স্হাপনায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকটাত্মীয় এখানে জুয়া খেলে সব হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যান। এরপর জুয়া বন্ধে এখানে অভিযান চালানো হয়।ְ’

রেল শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শ্রমিক লীগের অফিস বাটালি রোডে। স্টেশনে আমাদের কোনো দলীয় অফিস নেই।’

রেলের সম্পদ বেদখলের বিষয়ে জানতে বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুব উল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া মেলেনি।

পরিচ্ছন্নতা কাজের তদারকি করা বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) আব্দুল হানিফের কাছে অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্বপালন করছি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ভূসম্পদ দপ্তরের কাজ।’

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্ব নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাহিনীর কাজ সরকারি সম্পদ রক্ষা বা উচ্ছেদকৃত জায়গা পাহারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব জিআরপির।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!