পত্রিকার ভুয়া কাটিং/ চট্টগ্রামে রেলের দরপত্র নিয়ে অভিনব জালিয়াতি

রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের ৬৩৯টি প্লট বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বরাদ্দের দরপত্রে অভিনব কৌশলে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। নিজের পছন্দের লোককে প্লট পাইয়ে দিতে অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতির আশ্রয় নেয় রেলওয়েকেন্দ্রিক একটি চক্র। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে পত্রিকার ভুয়া কাটিং জমা দিয়েই নিজের পছন্দের লোককে কাজও পাইয়ে দিয়েছে এই চক্রটি।

দরপত্র নিয়ে জালিয়াতির এই ঘটনায় লেনদেন হয়েছে বিশাল অঙ্কের অর্থ। যা ভাগাভাগি হয়েছে রেলওয়ে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও। অভিনব এই জালিয়াতির মূল হোতা হলেন রেলওয়ে চট্টগ্রামের উপ-পরিচালকের (জনসংযোগ) কার্যালয়ের অফিস সহকারী শামসুল আরেফীন। তার সঙ্গে জড়িত ছিলেন রেলওয়ের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তাও। তবে এই ঘটনায় দায় সারতে কেবল অফিস সহকারী শামসুল আরেফীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টেন্ডারটি বাতিলের প্রক্রিয়ায় আছে।

জানা গেছে, রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন বেশকিছু প্লট বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য বার্ষিক অস্থায়ী ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি রেলগেটের উত্তর পাশে, দেওয়ানহাট পোস্তার পাড় এলাকায়, ষোলশহর দুই নম্বর রেল গেইট, কাটিরহাট স্টেশন, চৌমুহনী স্টেশন, লাকসাম, চিতৌষীরোড, চাঁদপুরকোর্টে এসব প্লটের অবস্থান। এর মধ্যে মাদারবাড়ি রেলগেটের উত্তর পাশে ৩১২টি প্লট, দেওয়ানহাট পোস্তাপাড় এলাকায় ৪১টি প্লট, ষোলশহর দুই নম্বর রেল গেইটে একটি প্লট, কাটিরহাট স্টেশনে পাঁচটি প্লট, চৌমুহনী স্টেশনে ৩৫টি প্লট, লাকসামে ৫৭টি প্লট, চিতৌষীরোডে ১৬৮টি প্লট এবং চাঁদপুরকোর্টে ২০টিসহ মোট ৬৩৯টি প্লটের জন্য দরপত্র আহ্বান করার কথা ছিল। প্লটের আয়তন সর্বনিম্ন ১০৪ বর্গফুট থেকে ৩০০ বর্গফুট।

গত ১৫ মে পত্রিকায় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অফিস আদেশ জারি করেন বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা। বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে দুটি জাতীয় এবং দুটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা বলা হয় ওই আদেশে।

অভিনব জালিয়াতির মূল হোতা রেলওয়ে চট্টগ্রামের অফিস সহকারী শামসুল আরেফীন।
অভিনব জালিয়াতির মূল হোতা রেলওয়ে চট্টগ্রামের অফিস সহকারী শামসুল আরেফীন।

জানা যায়, পরবর্তীতে রেলওয়ে চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মিজানুর রহমান এক অফিসে আদেশে জানান, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম মঞ্চে গত ১৭ মে এবং ঢাকাভিত্তিক নিউ নেশন ও মানবজমিনে গত ১৮ মে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

কিন্তু চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৭ ও ১৮ মে ওই চারটি পত্রিকায় বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের কোনো টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। অভিনব জালিয়াতির এই ঘটনায় গত ১০ জুন রেলওয়ে চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিসের মাধ্যমে অফিস সহকারী মো. শামসুল আরেফীনকে অভিযুক্ত সাব্যস্ত করে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক ঠিকাদার বলেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই প্লট সংক্রান্ত টেন্ডারের কাজ একটি নিদিষ্ট ব্যক্তিকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসিয়ালি আমাদেরকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।’

জানতে চাইলে রেলওয়ে চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মিজানুর রহমান মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে তার দপ্তরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অফিসিয়াল নিয়ম ভঙ্গ করায় মো. শামসুল আরেফীনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। টেন্ডারে অনিয়মের বিষয়টি এখনও প্রমাণিত হয়নি। এ ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে শামসুল আরেফীনের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা মুঠোফোনে সাড়া দেননি।

অভিযোগ রয়েছে, এমএলএসএস পদে যোগদান করার পর তিন বছর পূর্তি না হওয়ার আগেই দরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মো. শামসুল আরেফীনকে অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে চট্টগ্রামের সিনিয়র পার্সোনাল অফিসার (পূর্ব) সিরাজ উল্ল্যাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিধি অনুসারে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ফাইল দেখলে বলতে পারবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!