চট্টগ্রামে অবহেলায় অ্যাপেন্ডিসাইটিস ফেটে জটিল হচ্ছে রোগীর অবস্থা, ইনফেকশনে মৃত্যুর ঝুঁকিও

গাড়ি চালানোর সময় বাস ড্রাইভার আব্দুস সবুরের (৫৮) মাঝে মধ্যে পেটের ব্যথা হতো। আর ব্যথা হলেই আশপাশের রাস্তার পাশের দোকান থেকে ব্যথা কমানোর ওষুধ কিনে খেতেন। এভাবে গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ একদিন তার তীব্র পেট ব্যথা ওঠে। এরপর তাকে ভর্তি করানো হয় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। মেডিকেলের ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখেন, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস ফেটে গিয়ে ‘পেরিটোনাইটিস অ্যাপেন্ডিসাইটিসে’ রূপ নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তার অপারেশন করানো হয়। কিন্তু অপারেশন করানো হলেও, পরে তার শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।

চট্টগ্রামে গত কয়েক মাস ধরে বাড়ছে অ্যাপেন্ডিসাইটিস ফেটে যাওয়া জটিল রোগী। সময়মতো অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা না করানোর ফলে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের রোগীর ইনফেকশন হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, পেটের ব্যথা যদি হঠাৎ করে বেড়ে গিয়ে পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এটি অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়ার লক্ষণও হতে পারে। আর অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে নাড়িভুঁড়ির ভেতরের জীবাণু বাইরে বেরিয়ে আসে। এরপর ছড়িয়ে গিয়ে পেটের ভেতরের আবরণের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। পেটের আবরণের এই ইনফেকশনকে পেরিটোনাইটিস অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলা হয়৷

পেরিটোনাইটিস হলে নাড়িভুঁড়ি, লিভার, কিডনিসহ পেটের ভেতরে থাকা অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান ডাক্তাররা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ জন অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগ নিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। তবে এদের মধ্যে প্রায় ৬ থেকে ৭ জনের অ্যাপেন্ডিসাইটিস থেকে পেরিটোনাইটিরস জটিলতা দেখা দেয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ২৫ ও ২৭ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে বেশকিছু অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগীর অপারেশন পরবর্তী জটিলতা পাওয়া গেছে। এসব রোগী শুরুতে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। বেশিরভাগই পেটের ব্যথা উঠলে দোকান থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খেয়েছেন। এসব রোগীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস ফেটে গিয়ে পেরিটোনাইটিস অ্যাপেন্ডিসাইটিসে পরিণত হয়েছে।

পেরিটোনাইটিসের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পেটে একটানা তীব্র ব্যথা হতে থাকা, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া, জ্বর আসা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, পেট ফুলে যাওয়া।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগী আগেও ছিল, এখনও ভর্তি চলমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের রোগীরা জটিল অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। অ্যাপেন্ডিসাইটিস পেটের মধ্যে ফেটে যাচ্ছে অনেকের। পরবর্তীতে এটি পেরিটোনাইটিস অ্যাপেন্ডিসাইটিসে পরিণত হচ্ছে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে পেরিটোনাইটিস থেকে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পেরিটোনাইটিসের চিকিৎসার অংশ হিসেবে সাধারণত রোগীকে শিরার মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। আর অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলে দিতে হয়। এসব রোগীকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দিতে হয়, অবজারভেশনে থাকতে হয়।’

ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কখনও কখনও অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে চারপাশে পুঁজ জমে ফোঁড়ার মত হতে পারে। শরীর যখন অ্যাপেন্ডিসাইটিস ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করে, তখন এভাবে পুঁজ জমা হয়ে পেটের ভেতরে অ্যাবসেস বা ফোঁড়া সৃষ্টি হয়। এই ফোঁড়াতে ব্যথা হয়। কিছু বিরল ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন-পরবর্তী জটিলতা হিসেবেও এই ফোঁড়া দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ফোঁড়া হলে কখনও কখনও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা সম্পন্ন করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফোঁড়া থেকে পুঁজ বের করতে হয়। পুঁজ বের করতে আলট্রাসাউন্ড অথবা সিটি স্ক্যানের সাহায্য নিতে হয়।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!