চট্টগ্রামের শিবির নেতা গুজব ছড়াচ্ছেন লন্ডনে বসে, বিব্রত প্রবাসীরা

এসএম রেজাউল করিম, এক সময় চট্টগ্রাম মহানগরের শিবির ক্যাডার ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতার মুখে টিকতে না পেরে পালিয়ে যান মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইনে। তার নামে রয়েছে একাধিক নাশকতার অভিযোগও। সম্প্রতি বাইরাইন থেকে তিনি চলে যান লন্ডনে। সেখানে গিয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে দেশ ও সরকারবিরোধী গুজব ছড়াচ্ছেন।

জানা গেছে, শিবির নেতা রেজাউলের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার অর্থ সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ চটগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের যুব এবং সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তার নামে রয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় একাধিক নাশকতা ও সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ। তার এমন কর্মকাণ্ডে লন্ডন প্রবাসীরা বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন।

২০১৩ সালে সরকারবিরোধী কার্যক্রম শুরু করলে ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের রোষানলে পরে মারাত্মক আহত হন রেজাউল। এই ঘটনায় পর কিছুদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মুখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে পালিয়ে যান। বাহরাইনে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করার পর সেখান থেকেই গত দু’মাস আগে যান লন্ডনে।

সম্প্রতি লন্ডনে বসে তার ফেসবুকে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের সাবেকে এই শিবির নেতা।

গত ৬ জানুয়ারি রেজাউল তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘কাউয়া কাদের কি বেঁচে আছে!’

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখেন, ‘শেখ হাসিনার রাস্ট্র বিনাশী অপতৎপরতা শুরু হয় বিডিআর আর দরবার হলে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনা সভা।’

গত ২৭ মার্চ লেখেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দিলেন ৬ প্রার্থী। এই সব নাটক জনগণ খাইনা, উপজেলা নির্বাচনে কুত্তাও কেন্দ্রে যায়নি।’

চলতি বছরের ৩১ মার্চ তিনি লেখেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে মাফিয়া বুবু আপনার শেষ রক্ষা হবে না।’

এর আগে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট লেখেন, ‘হাসু আন্টির কারিশমা…ক্রিকেট করতে না পারলেও অর্থর্নীতিতে বাংলাদেশ তো ত্রেরাফল (ত্রিপল) সেঞ্চুরি করে ফেলছে…!!!’

এছাড়া রেজাউল করিমকে লন্ডনে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন সভা ও সমাবেশেও দেখা গেছে।

রেজাউল করিমের ফেসবুক আইডি দেখে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ৬ জানুয়ারি লন্ডনে মানবাধিকার সংগঠন ‘কুয়েল রাইট ইন্টারন্যাশনাল’র উদ্যোগে আয়োজিত ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন তিনি।

গত ২৭ ফ্রেব্রুয়ারি লন্ডনে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখেন রেজাউল। ওই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট, কানাডা প্রবাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. তাজা হাসেমী, জামায়াতের ইউরোপ প্রতিনিধি ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা ও আমার দেশ পত্রিকার ইউকে’র সম্পাদক ওলি উল্লাহ নোমান।

গত ৯ জানুয়ারি লন্ডনের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাসভবনের সামনে খালেদা জিয়া ও জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের মুক্তির দাবিতে ইউকে বিএনপি সভাপতি আব্দুল মালেকের সঙ্গে সরকারবিরোধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রেজাউল করিম।

গত ৩১ জানুয়ারি লন্ডনে একটি মানবাধিকার ‘সংগঠন নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’র উদ্যোগে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে ১০ দফা বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রেজাউল করিম।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে সরকারবিরোধী অপতৎপরতার অংশ হিসেবে বিডিআর বিদ্রোহ হত্যাকাণ্ড শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছেলেন সাবেক ইউকে বিএনপির সভাপতি বর্তমান বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান ও আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক অলিওল্লাহ নোমানের পাশেই বসা ছিলেন রেজাউল করিম।

এদিকে ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, বিদেশে বসে অব্যাহতভাবে দেশের বিরুদ্ধে প্রচার চালালে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যারা এই কাজ করে, তাদের তালিকা করে যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসএম রেজাউল করিমের হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলে তিনি রিসিভ করার পর প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এমএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!