চট্টগ্রামে জোড়া খুনের মূল পরিকল্পনাকারী কিশোর গ্যাং লিডার গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীর বিটেক মোড়ে জোড়া খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ফয়সালকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) ভোর ৪টায় হালিশহর এলাকার বাসা বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ফয়সাল নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার মো. নূর নবীর ছেলে। প্রেস ব্রিফিং এ র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম এ তথ্য জানান।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়তলীর কথিত বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠুর অনুসারী এসব কিশোর ও তরুণরা চলাফেরা করত বন্ধুর মতো। ইলিয়াছকে সবাই বড় ভাই বলে সম্বোধন করত। সিরাজুল ইসলাম শিহাব ও বন্ধু রবিউলের মধ্যে নারী সংঘটিত বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হালকা মারামারি হয়।

এ নিয়ে গত সোমবার বিটেক এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। হত্যার ঘটনায় যারা অংশ নিয়েছেন তারা সবাই কিশোর। ওই ঘটনার মীমাংসা করার কথা বলে দু’পক্ষকে ডেকে রাত ৮টায় বৈঠকে বসে বড় ভাই ইলিয়াছ। ওই বৈঠকে ইলিয়াছের সামনেই বেধড়ক পিটুনি ও ছুরিকাঘাত করে মাসুম ও সজীব নামে দুই যুবককে খুন করে ফয়সাল ও রবিউল বাহিনী।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় সাগরিকা জহুর আহমদ স্টেডিয়াম এলাকায় নিহত মাসুমের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম শিহাব তার বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে যায়। শিহাবকে উদ্দেশ্য করে ফয়সাল ও রবিউল বলে ওই মেয়ের সঙ্গে তোকে মানায়নি এবং মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সামান্য মারামারিও হয়। এতে ফয়সাল ও রবিউলরা আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং বিষয়টি তাদের কথিত বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠুকে জানানো হয়। এরপর রাত ৮টার দিকে ইলিয়াছ সিরাজুল ইসলাম শিহাবকে ফোন করে বিষয়টি মীমংসার জন্য তার অফিসে আসতে বলে। ইলিয়াছের কথামত সরল বিশ্বাস নিয়ে শিহাব তার বন্ধু মাসুম, সজীব, ফাহিম, রোকন, রজিন, তুহীন, মেহেদী হাসান, ইউসুফ ও প্রান্তকে নিয়ে ইলিয়াছের অফিসে যায়।

সেখানে আগে থেকেই ইলিয়াসের নির্দেশে ও ফয়সালের পূর্ব পরিকল্পনায় রবিউলসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন উঠতি বয়সী কিশোর ছেলে দেশীয় ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকে। যেটা শিহাব ও তার সাথে থাকা বন্ধুরা জানতো না। সেখানে আসার পর উভয় পক্ষ কথা কাটাকাটি এবং কথার একপর্যায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সে সময় বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠু, ফয়সাল এবং রবিউলকে উদ্দেশ্য করে বলে শালাদের মার। ইলিয়াসের নির্দেশে এবং ফয়সালের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিউল ও তার অনুসারীরা কাঠের বাটাম দিয়ে মাসুমদের বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে মাসুম ও সজীবকে একাধিক ছুরিকাঘাত করে ফয়সাল, রনি ব্রো, বাবু এবং আকাশ।

আহত মাসুম ও সজীবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইলিয়াস, ফয়সাল এবং রবিউলসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন মাসুম ও সজীবকে রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।

কর্নেল মোঃ মাহবুব জানান,জোড়া খুনের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ফয়সাল হালিশহর এলাকার একটি বাসা বাড়িতে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলো। আজকে ভোর ৪টায় ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফয়সাল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বলে স্বীকার করে। গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহত সজীবের বড় ভাই বাদী হয়ে ৯ মে পাহাড়তলী থানায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দয়ের করেন। মামলা দায়েরর পর পুলিশ বিশেষ অভিযানে ইলিয়াস, রবিউলসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে ৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

আরএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!