চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু, তদন্ত চান জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আকবর হোসাইনের ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবিতে আমরণ অনশনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত ২৮ আগস্ট জিইসি মোড় এলাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে যান আকবর। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার ধামরাই উপজেলার ধুনট ইউনিয়নে তার লাশ দাফন করা হয়।

আকবর হোসাইন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আকবরের পৈতৃক নিবাস ঢাকার ধামরাই উপজেলার ধুনট ইউনিয়নে। ব্যবসার সুবাদে আকবরের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মৌলভীবাজার জেলায় বসবাস করছেন। তবে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে পুরান ঢাকার কলতাবাজারের একটি মেস বাসায় থাকতেন। তার পরিবার জানিয়েছে, সম্প্রতি তিনি মোবাইল ও মানিব্যাগ ছাড়াই ঢাকা থেকে বাসে চট্টগ্রামে এসেছিলেন।

এদিকে সহপাঠীর ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২৭ আগস্ট ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আকবর হোসাইন পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যায় এবং তার সহপাঠীরা ফোনে যোগাযোগ করলে আশপাশে অবস্থান করছে বলে জানায়। সর্বশেষ রাতে যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন সে একটু পর বাসায় ফিরবে বলে তার বড় বোনকে জানায়।

তারপর রাত ৮টা ৫৩ মিনিটের দিকে জানা যায়, সে চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে যায় এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। দায়িত্বরত ডাক্তার ও পুলিশের তদন্ত থেকে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে স্পষ্টত হয় যে, এটি কোনো আত্মহত্যা কিংবা দুর্ঘটনা নয়। কারণ তাকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।

এর মধ্যেই চট্টগ্রামের খুলশী থানায় আকবরের পরিবার একটি মামলাও করেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবরের অবস্থা ছিল খুবই আশঙ্কাজনক এবং পরবর্তীতে ১ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে সে মারা যায়।

আকবরের সহপাঠীরা জানান, আমাদের সহপাঠীর সঙ্গে খুব অন্যায় করা হয়েছে। আমাদের ধারণা তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা একজন সহপাঠীর এমন রহস্যজনক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। সহপাঠী হত্যার দ্রুত সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হলে অনতিবিলম্বে আমরা মানববন্ধনসহ প্রয়োজনে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, আমি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় কথা বলেছি। ঘটনার দিন আকবর হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করে কথা বলেছে। কিন্তু সেগুলো তার ফোন থেকে ডিলিট করা হয়েছে। খুলশী থানা পুলিশ ওই তথ্যগুলো উদঘাটন করার জন্য সবকিছু ঢাকায় ডিবিতে পাঠিয়েছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে আকবরের বোন লাভলী খান আঁখি বলেন, পরিকল্পিতভাবেই আকবরকে হত্যা করা হয়েছে। আকবরের মৃত্যু আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আকবরের পরিকল্পনা ছিল সে বড় হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবে। ব্যাংকিং খাতে দেশ ও মানুষের জন্য সে কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। অল্পবয়সেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার পরিবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!