চকরিয়ায় মানা হচ্ছে না লকডাউনের নিয়ম, মাঠে নেই কোনো পৌর কাউন্সিলর

করোনা হটস্পট হয়ে উঠায় চকরিয়া পৌরসভা ও একটি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা “রেড জোনের” আওতায় আনা হয়েছে। এর পর চকরিয়া পৌরসভা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডকে ১৪ দিনের জন্য ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনও চলছে ঢিমেতালে।

এ নিয়ে শনিবার (৬ জুন) শনিবার রাত ১২টা থেকে লকডাউন কার্যকরের কথা উল্লেখ করে উপজেলা প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এরপর থেকে লকডাউন কার্যকরে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন। তবে তিনি একাই লকডাউন কার্যকরের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও মাঠে দেখা যায়নি পৌরসভার কোনো কাউন্সিলর ও ওয়ার্ডের সেচ্ছাসেবকদের।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের প্রথমদিন রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। পৌরশহরের প্রতিটি অলি-গলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলো অটোরিক্সা, টমটম, ইজিবাইক, ব্যক্তিগত গাড়িসহ গণপরিবহন। মার্কেট ও বাজারে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। পরে খবর পেয়ে ইউএনও সৈয়দ তাবরীজের নেতৃত্বে একদল সেচ্ছাসেবক, কয়েকজন পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়ে তড়িৎ অভিযান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়।

তবে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন সোমবার হওয়ায় খুলেছে মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার। আগের মতোই চলছে সব ধরনের যানবাহন। অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকজন। মানা হচ্ছে না লকডাউনের কোনো নিয়মকানুন। তেমনিভাবে চোখে পড়েনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৮নং ওয়ার্ডকে রেড জোনের আওতায় এনে লকডাউন ঘোষণি করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে লকডাউনকৃত এলাকায় ওষুধের দোকান ছাড়া সবধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত শুধু পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি সেবার গাড়িগুলো এর আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া সপ্তাহে চারদিন মুদির দোকান ও তিনদিন কাঁচাবাজার খোলা রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়। এসব ছাড়া অন্যন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউন বাস্তবায়নে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে ৪৫ জন করে সদস্য রাখা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি হচ্ছেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। তবে লকডাউনের প্রথমদিন দেখা মিলেনি কাউন্সিলর ও কাউন্সিলরদের নির্বাচিত সেচ্ছাসেবকদের। শুধুমাত্র উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন সেচ্ছাসেবককে মাঠে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিবুল হক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি লকডাউন কার্যকর করতে। কিন্তু মানুষ কথা শুনছে না। তাদেরকে বিভিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছি। অনেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলছিলো। সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমার ওয়ার্ডে মাতামুহুরী নদীবেষ্টিত। নদীর ওপারে কাকারা ইউনিয়ন। দেখা গেছে অনেকে নৌকা নিয়ে পার হয়ে পৌরশহরে ডুকে পড়ছে। সেচ্ছাসেবকদের আগামীকাল থেকে মাঠে কাজ করবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, লকডাউনের প্রথমদিন তাই নমনীয় ছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রধান করে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনশৃক্সখলা বাহিনী ও সেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে লকডাউন কার্যকর করবো। এছাড়া চকরিয়া পৌরশহরে ঢুকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসানোর কথা চিন্তা করছি।

তিনি আরও বলেন, যারা দিনমজুর ও অসহায় রয়েছে তাদের জন্য খাবার বরাদ্দ করেছি। এছাড়া শিশু খাদ্যের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!