৫ কাঠার জমির সবই ঠিক, তবু খুলশীতে জমিরের বাগড়ায় বিব্রত মহিউদ্দিন বাচ্চু

চট্টগ্রামের খুলশী এলাকার জমি নিয়ে আলোচনায় এলেন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। বায়নাসূত্রে কেনা জমিতে সাইনবোর্ড ঝোলাতে গিয়েই বিক্রেতার সঙ্গে যুবলীগের এ শীর্ষ নেতার বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বিষয়টি আলোচনায় এলে চট্টগ্রামের রাজনীতিপাড়ায় সৃষ্টি হয় নানা গুঞ্জন।

মহিউদ্দিন বাচ্চুর বায়না সূত্রে কেনা ৯৫ গন্ডা জমির মধ্যে শুধু ৫ কাঠা জমি নিয়েই খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এসএম জমির উদ্দিনের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়।

খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটির কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ২০ একর জমির ২৫০টি প্লট নিয়ে খুলশী থানার মুরগীর ফার্ম এলাকায় গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটি নামে একটি আবাসিক এলাকা তৈরি হয় ২০০০ সালে। এসএম জমির উদ্দিন ও মো. আলমগীর নামে দুই ব্যক্তি প্রকৃত মালিক থেকে ‘পাওয়ার অব এটর্নি’ নিয়ে জমিগুলো বিক্রি করে আসছেন।

এসব জমির মধ্যে মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রায় ২ একর জমি (৯৫ গন্ডা) বায়না করেন। জমিগুলো তিনি বায়না করেন মো. আলমগীরের কাছ থেকে। কিন্তু ৫ কাঠার একটি জমি বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে জমির উদ্দিনের সঙ্গে নগর যুবলীগ আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরোধ তৈরি হয়।

খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম জমির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৫০টির অধিক প্লট নিয়ে ২০০০ সালে খুলশি গার্ডেন ভিউ নামের আবাসিক প্রকল্পটি চালু হয়। ২০১৫ সালে প্লট মালিকদের নিজ নিজ জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ৮টি অবিক্রিত প্লটের একটি ৫ কাটার প্লট নিয়ে যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে সমস্যা হয়েছে। হাউজিং সোসাইটি এ ব্যাপারে কমিটি করেছে। কমিটি কাগজপত্র যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেবে।’

তিনি বলেন, ‘জমির মালিক নজির আহমদের কাছ থেকে ২০০৪ সালে আমমোক্তার মূলে জায়গাটি এই হাউজিংয়ে যুক্ত করা হয়। জায়গায় ব্রিকওয়ালও দেওয়া আছে।’

সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এসএম বজলুর রশিদ জানান, ‘জমির উদ্দিন গত রমজানের মাঝামাঝি সময়ে বায়না সূত্রে জায়গার মালিক মহিউদ্দিন বাচ্চুকে বিভিন্ন দাগের জায়গা বুঝিয়ে দেয়। সে অনুযায়ী মহিউদ্দিন বাচ্চু একটি প্লটে সাইনবোর্ড ঝোলান। জমির উদ্দিনের বুঝিয়ে দেওয়া একটি ৫ কাঠার প্লটে সাইনবোর্ড ঝোলানোর পর কারও আপত্তি তোলার সুযোগ নেই। জমিগুলো মহিউদ্দিন বাচ্চু নিয়েছেন মো. আলমগীরের কাছ থেকে।’

এস এম বজলুর রশিদ আরও জানান, ‘সোমবার (৭ জুন) সোসাইটির পক্ষ থেকে সভা আহবান করা হয়। সভায় মহিউদ্দিন বাচ্চু ও জমির উদ্দিনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। মহিউদ্দিন বাচ্চু উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে জমির উদ্দিন উপস্থিত হতে পারেননি। তবে তিনি মোবাইলের মাধ্যমে সভায় সংযুক্ত হন। সভায় তিনি ওই জমি মহিউদ্দিন বাচ্চুকে গত ১৮ রমজান যে বুঝিয়ে দিয়েছেন তা স্বীকারও করেন।’

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এসএম বজলুর রশিদ বলেন, ‘জমির উদ্দিন এই সোসাইটি তৈরি করেছে। তিনি প্রতিষ্ঠাতা। তিনি জায়গার মূল মালিকদের কাছ থেকে পাওয়ার অব এটর্নি নিয়ে এই সোসাইটি গড়ে তুলেছেন। জমি বিক্রি করেছেন। মহিউদ্দিন বাচ্চু রাজনীতি করেন। তিনি অনেকগুলো জমি কিনেছেন এই সোসাইটি থেকে৤ উনি জোর করে কোনো জমি এখান থেকে নেননি। নিতে গেলে সম্মানহানি হবে ওনার। এই সুযোগও নেই এখানে।’

তিনি বলেন, ‘জমির উদ্দিনের বুঝিয়ে দেওয়া একটি জমি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। সমিতি ৮ জনের একটা কমিটি করে দিয়েছে। উভয়পক্ষের কাগজ দেখে এ বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

সোসাইটির কর্মকর্তারা জানান, সোসাইটির পশ্চিম দিকে বায়না সূত্রে কেনা কিছু জমি মহিউদ্দিন বাচ্চুকে দেখিয়ে দেন জমির উদ্দিন। সে হিসেবে ওইসব জমিতে তিন পক্ষের তিন সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। জমিরের দেখিয়ে দেওয়া দুটি প্লটের মধ্যে একটি ৫ কাঠার খালি প্লটে গত ৩ জুন মহিউদ্দিন বাচ্চু জমি সাইনবোর্ড দেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর মুরগীর ফার্ম এলাকায় খুলশী মৌজার, আর এস ৫৫৩, পিএস ১৮০ নাম্বার প্লটে সাইন বোর্ড লাগানো রয়েছে মহিউদ্দিন বাচ্চুর নামে।

এ বিষয়ে খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটির সভাপতি ইরশাদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘জায়গাটি জমির উদ্দিন ও আলমগীরের ছিল। এর মধ্যে জমির উদ্দিন তার জায়গা বিক্রি করেছে বিভিন্ন জনের কাছে। এছাড়া আলমগীর তার জায়গা মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করেছে। এর আগে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, জমির উদ্দিন, আলমগীরসহ অন্যান্যরা মিলে একদিন গিয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে জায়গা বিক্রির সীমানা দেখিয়ে দেয়। তারপর সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। এখন যেহেতু জমির উদ্দিন আবার আপত্তি তুলেছেন সেহেতু এটি সমাধানে হাউজিং কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি করেছে কমিটি বিষয়টি সমাধান দেবে।’

এ বিষয়ে জানতে নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই সোসাইটির ৯৫ গন্ডা জমি আমি দীর্ঘদিন আগেই বায়না করেছি। মো. আলমগীর থেকেই উল্লেখিত জায়গা আমি বায়না সূত্রে কিনেছি। জমির উদ্দিন, আলমগীর সাহেব এবং খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জায়গাটি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। হাউজিংয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে জমির উদ্দিন ৫ কাঠার একটি জমি বুঝিয়ে দেন। এতে সাইনবোর্ড লাগাতে গেলেই উনি আপত্তি তোলেন। এখন সমিতি একটি কমিটি করেছে। কাগজপত্র যাচাই করে এ বিষয়ে সমিতি সিদ্ধান্ত নেবে।’

মহিউদ্দিন বাচ্চু আরও বলেন, ‘রাজনীতি করি বলেই ৫ কাঠা জমি নিয়ে ছোট একটি সমস্যাকে বড় করেই আমার প্রতিপক্ষ সামনে এনেছে। অথচ এটি নিয়ে আমার সঙ্গে কারও বাকবিতণ্ডাও হয়নি।’

এদিকে খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটির পক্ষ থেকে সোমবার (৭ জুন) একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, ‘সোমবার হাউজিং সোসাইটির পক্ষ থেকে সভা আহবান করা হয়। এ সভায় মহিউদ্দিন বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন। তবে জমির উদ্দিন ব্যক্তিগত কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। জমির উদ্দিন সমিতির সভায় টেলিফোনে তার উপস্থাপিত বক্তব্যে গত ১৩ মে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।’

এতে আরও বলা হয়, জমির যে অংশ নিয়ে জমির উদ্দিন আপত্তি জানিয়েছেন তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে হাউজিং সোসাইটি ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!