চট্টগ্রামে ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে পড়ছে চিকিৎসা সংকট। প্রতিদিনই হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছুটে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে কেউ না কেউ। এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রোগীদের কোন্ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা মিলবে— সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়াটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। দিনভর ছোটাছুটি করে যদিও কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে একটা সিট জোগাড় করতে পারছেন, ততক্ষণে দেখা যায় রোগীর যুদ্ধ করার সবটুকু শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে।
চার দিন আগে সকাল ১১টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিনটি হাসপাতালে ঘুরে একটিতেও ভর্তি হতে পারেননি নগরীর বায়োজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীর। শেষে মেয়র আ জ ম নাছিরের সুপারিশে বিকেলে পার্কভিউতে ছগীরকে ভর্তি করার সুযোগ পাওয়া গেলেও ততক্ষণে সব শেষ। হাসপাতালে ভর্তি করানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যান তিনি।
সর্বশেষ শুক্রবার (১২ জুন) দিনেও এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক নেতা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে সকাল ১১টা থেকে ছোটাছুটি করে বিকেল ৪টা নাগাদ জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ সিট পেলেও চিকিৎসাহীন ৫ ঘন্টার ছোটাছুটিতে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় তার মৃত্যু। জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান তিনিও।
শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়। অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছোটাছুটি এখন চট্টগ্রাম নগরীর নিত্যদিনের চিত্র। প্রতিদিনই এভাবে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই অবস্থাতেও চিকিৎসা সংকট কাটানোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ পর্যন্ত নিতে পারেনি। এই ধরনের ভোগান্তির শিকার হওয়া রোগীর স্বজনদের কেউ কেউ বলছেন, আইসিইউ নয় মূলত চিকিৎসার অভাবেই মারা গেছে তাদের স্বজনরা।
এমন পরিস্থিতিতে দাবি উঠেছে অন্তত অসুস্থ রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছোটাছুটির ভোগান্তি থেকে রোগীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য কোন উদ্যোগ যদি নেয় চট্টগ্রামের প্রশাসন। খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা যায় জানিয়ে শরীফুল ইসলাম সাইমন নামে একজন বলেন, ‘এখনকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোথায় গেলে চিকিৎসা পাবে— সেটাই কেউ জানে না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল দৌড়াতে হচ্ছে মানুষকে। প্রশাসন চাইলে খুব সহজে এটা সমাধান করতে পারে।’
কিভাবে এই ভোগান্তি থেকে নাগরিকদের মুক্তি দেওয়া যায় তার ব্যাখা দিয়ে সাইমন বলেন, ‘এমনিতেই একটা তদারকি দল করা হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে। সেখানে আপডেটগুলো প্রতিদিন হালনাগাদ করে সেই টিমের তত্ত্বাবধানে যদি একটা হটলাইন চালু করা যায়। যে হটলাইনে যোগাযোগ করলে তারা অন্তত এটা বলতে পারবে কোন হাসপাতালে গেলে এই মুহূর্তে সিট পাওয়া যাবে। তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সমাধান হয়। এমনকি কোথাও সিট না থাকলেও রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে হাসপাতালে না দৌড়ে একটা বিকল্প ভাবার সুযোগ পাবে।’
এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বেসরকারি হাসপাতাল সার্ভেইল্যান্স টিমের আহ্বায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা করতে পারলে খুব ভাল হয়। তবে এক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। আমরা এই বিষয়টা ভেবে দেখছি। তিন-চারদিনের মধ্যেই সম্ভব হলে এই হটলাইনটা চালু করার বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলবো।’
এআরটি/সিপি