কেউ জানে না কবে খুলবে আমিরাতের শ্রমবাজার?

শ্রমিক ভিসা বন্ধের সাত বছর

দীর্ঘ অপেক্ষার পরও আলোর মুখ দেখেনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্ধ শ্রমবাজার। দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শ্রমবাজার রেমিটেন্স প্রেরণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও চলতি বছরের আগস্টে শ্রমিক ভিসা বন্ধে সাত বছরের ধাক্কা লাগবে। নানা সময় নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও কার্যত কোনো ফলাফল আসেনি ভিসা জটিলতার।

নতুন শ্রমিক ভিসা বন্ধ ও অভ্যন্তরীণ মালিক পরিবর্তনের সুযোগ বঞ্চিত অসহায় অসংখ্য প্রবাসী গত সাড়ে ছয় বছরে দেশে ফিরেছেন ক্রমাগত হারে। কমেছে আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গমন করেছেন মাত্র ৯০৬ জন। এর আগে ২০১৮ সালে দেশটিতে পাড়ি জমান ৩ হাজার ২৩৫ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪২৭ জন মহিলা শ্রমিক। যেখানে ভিসা বন্ধের আগে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গড়ে দুই লাখ করে শ্রমিক কর্মের সন্ধানে সেখানে যেতেন।

২০১২ সালের আগস্ট মাসে হঠাৎ করে দেশটি বাংলাদেশি শ্রমবাজার সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশিদের অভ্যন্তরীণ মালিক পরিবর্তনের সুযোগও। আমিরাতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার হার বেড়ে যাওয়া এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও ধারণা প্রবাসীদের। ভিসা বন্ধের দু’বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সফরকালে ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি স্থানান্তর’ ও ‘নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা’ চুক্তিগুলো প্রবাসীদের মনে আশার সঞ্চার ঘটায়। কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি তাতেও। সেসময় আরব আমিরাতের কারাগারগুলোতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনসহ মোট এক হাজার ১৯ জন বাংলাদেশি বন্দি থাকার কথা জানানো হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় দফা সফরে জানা গেল এখানো ৭০০ বন্দি রয়েছে দেশটির বিভিন্ন কারাগারে। তাদের স্থানান্তর করার চেষ্টা চলছে।

এদিকে দেশটিতে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক এক্সপো-২০২০। গুঞ্জন ছিল দুবাইয়ে আয়োজিত ওই আন্তর্জাতিক এক্সপো’র বিশাল কর্মযজ্ঞ ঘিরে হয়ত খুলে দেওয়া হতে পারে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার। সেই আশাও স্বপ্নের মতই রয়ে গেল। দুবাইয়ের জেবল আলীতে এক্সপো-২০২০ সাইটে দ্রুতগতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দালান, সড়ক, ব্রিজ, মেট্রোরেলের কাজ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই শেষের পথে। আন্তর্জাতিক এই মেলা বসবে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর, চলবে ১০ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত। ভোটাভুটিতে রাশিয়ার বিপরীতে জয় লাভ করা আয়োজক শহর দুবাইয়ে এক্সপো-২০২০ তে অংশগ্রহণ করবে বিশ্বের ১৯২টি দেশ। এতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দৈনিক ৬০টি লাইভ ইভেন্ট চলবে উল্লেখ্য করে গত ২৭ এপ্রিল টিকেট মূল্যও ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ঘোষিত টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে দৈনিক ৩৩ ডলার ও তিন দিনের প্যাকেজ ৭১ ডলার। তবে দেশটির ৬৫ বছর ও তার উর্ধ্ব বয়সের জৈষ্ঠ্য নাগরিক ও পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্যে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রেখেছে এক্সপো-২০২০ কর্তৃপক্ষ। বিশাল এই কর্মযজ্ঞে অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করলেও এই কর্মযজ্ঞ ঘিরে প্রত্যাশিত সেই লক্ষ্য অর্জন তথা ভিসা জটিলতা অবসান হয়নি।

অন্যদিকে, দেশটিতে ভ্রমণ ভিসার শিথিলতায় কিছু পরিমাণ বাংলাদেশি যাওয়ার খবর রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই পরবর্তীতে ভিসার অবস্থান পরিবর্তন করে সেখানে নিয়মিত শ্রমিক ভিসা নবায়ন করছেন। এই প্রক্রিয়ায় অনেক জটিলতাও রয়েছে। আবার আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীদের কেউ কেউ ভাল চাকরির সন্ধান পেলেও অভ্যন্তরীণ মালিক পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যার কারণে নিয়মিত শ্রমিক ভিসায় দেশটিতে যেতে ইচ্ছুকরা যেমন আশায় পথ চেয়ে আছেন তেমনি এখানে বসবাসরত প্রবাসীরাও অভ্যন্তরীণ মালিক পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হবার জন্যে প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন। নতুন ভিসা না পেলেও যাতে অন্তত কর্মস্থল পরিবর্তন করে ন্যায্য মজুরির চাকরির সুযোগ পান তারা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!