কাগজ কুড়ানোর ফাঁকে তারা দিনে করে রেকি, রাতে ডাকাতি

ডাকাতচক্রের ৬ জন গ্রেপ্তার, আছে শিশু সদস্যও

প্রতিদিন সকাল হলেই কাগজ, ভাঙারি ও পরিত্যক্ত জিনিস কুড়ায় তারা। কুড়ানোর বাহানায় নজর রাখে নগরের বিভিন্ন ভবনের বাসা-বাড়িতে। কোনো বাসায় লোকজন না থাকলে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এভাবে কয়েকটি গ্রুপে নগরে চষে বেড়ায় তারা। এমনকি তাদের গ্রুপে আছে শিশু সদস্যও। তারপর টার্গেট করা বাসায় ঢুকে লুট করে নিয়ে যায় স্বর্ণালঙ্কার, টাকা থেকে শুরু করে মূল্যবান জিনিস।

এমনই এক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মাটিতে গর্ত করে লুকিয়ে রাখা ৫২ ভরি স্বর্ণ এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন আরিফ হোসেন মেহেদী (২৬), মো. শরীফ (২০), মেহেদী হাসান রুবেল (২৩), সাইদুল ইসলাম রিগ্যান (২২), হান্নান হোসেন (২৩) ও রিয়াদ হোসেন (১৯)।

জানা গেছে, নগরীর সদরঘাট থানার একটি বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি দায়ের হওয়া মামলায় জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকা থেকে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি পাইপগান ও এক রাউন্ড কার্তুজ এবং বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে নগরের চকবাজার থানা এলাকার একটি বাসা থেকে ১২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব স্বর্ণালঙ্কার গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মেহেদীবাগের আমিরবাগ হাউজিং সোসাইটির একটি বাসা থেকে চুরি হয়েছিল বলে জানান উপ পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।

পুলিশ আরও জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আরিফ হোসেন মেহেদী কিছু চোরাই স্বর্ণালঙ্কার তার হেফাজতে আছে বলে জানায়। এ তথ্যের ভিত্তিতে নগরের ডবলমুরিং থানার বারেক বিল্ডিং মোড়ে সানাই সিনেমা হলের পেছনে কনকর্ড গ্রুপের একটি খালি জায়গায় মাটি খুঁড়ে প্রায় ৫২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।

পরে আরিফ আমিরবাগে চুরির কথা স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে। আরিফ জানায়, চুরির আগে শরীফ কাগজ ও প্লাস্টিকের বোতল কুড়ানোর ভান করে ওই বাসায় গিয়ে রেকি করে। তার কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে চুরি করা হয়। আরিফ, শরীফ, শাকিল ও পিচ্চি জাহিদ মিলে চুরি করে।

তবে শাকিল চুরির পরদিনই মাদকের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়, পিচ্চি জাহিদ এখনও পলাতক। আরিফ ও শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের গডফাদার মনির ও তারেক। তাদের দু’জনকে পুলিশ আগেই গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ আরও জানায়, আমিরবাগে চুরির পর আরিফ চট্টগ্রামের বাইরে চলে যায়। বৃহস্পতিবার সে চট্টগ্রামে ঢোকার তথ্য পেয়ে পুলিশ তাকে ধরতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। এক পর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে। নগরের বন্দর, ইপিজেড, ডবলমুরিং ও হালিশহর থানায় ১০টিরও বেশি চুরির মামলা আছে তার নামে। এছাড়া শরীফের নামে আছে দুটি অস্ত্র মামলা।

সংবাদ সম্মেলনে উপ পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম নগরে দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে এই চক্র। তারা দিনে টোকাই সেজে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি রেকি করে। এজন্য তাদের আলাদা একটি টিম আছে। যেসব বাসায় লোক থাকে না কিংবা নির্জন এলাকা—সেসব জায়গা রেকি করে তারা অন্য সদস্যদের জানায়। ছোট শিশুদেরও তারা এ কাজে ব্যবহার করে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!