কলেজছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার পেকুয়ায়, পরিবারের দাবি হত্যা

কক্সবাজারের পেকুয়ার কলেজছাত্র মিজানুর রহমানের লাশ ঝুলছিল ফ্যানের সঙ্গে। ঝুলন্ত অবস্থায় তার এক পায়ের হাঁটু ভাঁজ হয়ে সরাসরি ফ্লোরের সঙ্গে লাগানো ছিল। অন্য পা ছিল টেবিলের ওপরে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছ এমন চিত্র। মিজানের লাশ উদ্ধারের সময় তার রুমের দরজাও খোলা ছিল বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

মিজানের পরিবারের দাবি, টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে মিজানকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য মিজানকে খুন করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তার পরিবারের। তবে পুলিশের ধারণা এটি আত্মহত্যা।

রোববার (১৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে পেকুয়া সদরের পূর্ব বাইম্যাখালী এলাকার একটি বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মিজান পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের সুতাচোরা এলাকার আশেক এলাহীর ছেলে। তিনি কক্সবাজার সরকারি কলেজ স্নাতকে লেখাপড়ার পাশাপাশি পেকুয়া বাজারের এসডি সিটি সেন্টারের ফারুক জোন নামে একটি কসমেটিকস দোকানের চাকরি করতেন।

লাশ উদ্ধারের আগে রাত ৮টার দিকে মিজানের ব্যবহৃত ‘আদনান মিজান’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। পোস্টে লেখা হয়, ‘বাবা তোমার কথা রাখতে পারলাম না। জীবন মানেই সংগ্রাম। আমি হেরে গেলাম।’ এছাড়া তার ফেসবুক স্টোরিতেও দেওয়া হয় ফ্যানের সঙ্গে লাগানো গামছার ছবি।

ওই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে পুলিশ এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে।

কিন্তু মিজানের পরিবার বলছে, বিদেশ যাওয়ার জন্য মিজানের কাছে গতকাল (রোববার) এক লাখ টাকা ছিল। ওই টাকাগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে তার মামার অ্যাকাউন্টে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় টাকাগুলো আর জমা দিতে পারেনি মিজান। ওই টাকার জন্যই মিজানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিজানের মোবাইল থেকে হত্যাকারীরা ওই স্ট্যাটাসগুলো দিয়েছে বলে ধারণা পরিবারের।

মিজানের বাবা আশেক এলাহী বলেন, ‘মিজান রোববার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে দোকানে চলে যায়। আমার ছেলের সাথে পরিবারে কোনো রকম ঝামেলা হয়নি। সন্ধ্যায় ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে হাসিমুখে চাকরিতে চলে গেছে। কিন্তু রাত ৯টার সময় খবর পাই আমার ছেলে মারা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যা করলে কেউ দরজা খোলা রাখে না। তার লাশ উদ্ধারের সময় দরজা খোলা ছিল। আমার ছেলের এক পা ছিল হাঁটু ভাঁজ করা অবস্থায় মাটিতে। অন্য পা ছিল টুলের ওপর। সেখান থেকেই স্পষ্ট যে, আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনা আত্মহ্ত্যা বলে চালিয়ে দিতে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর হায়দার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়ে মিজান ধারাবাহিক স্ট্যাটাস দিয়েছে। হতাশা থেকে মিজান আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আসল কারণ জানা যাবে।’

এদিকে ময়না তদন্ত শেষে সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে মিজানকে কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়।

স্থানীয়রা বলছেন, মিজান ছিলেন শান্ত স্বভাবের। ঘটনার ছবি ও ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা নয়। এক পা টুলের ওপর, আরেক পা মাটিতে। সঠিক তদন্তে মাধ্যমে আসল ঘটনা উঠে আসুক।

আরএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!