করোনার ভয়ে ডাক্তার নেই আনোয়ারার হাসপাতাল-ল্যাবে

করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ভেঙে পড়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চিকিৎসাসেবা। ডাক্তারশূন্য হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সেবা নিতে আসা রোগীরা। এছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা ক্লিনিক্যাল ল্যাবগুলোতেও গত ১৫ দিন ধরে বসছে না কোনো ডাক্তার, কিছু ল্যাব খোলা দেখা থাকলেও নেই কোনো চিকিৎসক।

উপজেলার সরকারি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা হলেও ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে রোগীরা।

সোমবার সরেজমিনে আনোয়ারা হাসপাতালে দেখা যায়, বহির্বিভাগে কোনো ডাক্তার না থাকায় রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে এ বিভাগ। জরুরি বিভাগেও যথাযথা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ জনগণের মাঝে। তাই সাধারণ রোগের লক্ষণে আতঙ্কিত হয়ে তারা ছুটছেন হাসপাতাল-ক্লিনিকে। হাসপাতালে গিয়ে সেবাদাতাদের অসহযোগিতা আর বিরূপ আচরণে ক্ষোদ্ধ রোগী ও স্বজনরা। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সাধারণ মানুষ।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে ৩-৪ জন ডাক্তারই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন আনোয়ারা হাসপাতালে। বহির্বিভাগে কোনো ডাক্তারই বসেন না। তাই চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগীকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এছাড়া আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী বাজার, বন্দর মহালখাঁন বাজার, বটতলী, আনোয়ারা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ক্লিনিক্যাল ল্যাবগুলো খোলা থাকলেও চিকিৎসকদের দেখা মেলেনি কোথাও। এতে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সাধারণ জ্বর-ব্যথায় আক্রান্ত হলেই পড়ে বিপাকে। যার ফলে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে মানুষ আতঙ্কের মাঝে আনোয়ারা হাসপাতালের এই জোড়াতালির চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সব মহলেই হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আনোয়রা চাতরী চৌমহনী বাজারে অবস্থিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার দি ল্যাব এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির উদ্দিন ডাক্তার অনুপস্থিতির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার ল্যাবে ৫ জন চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখতেন। করোনা মহামারি ছড়ানোর পর ডাক্তারদের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করার পরও তাদের চেম্বারে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ডাক্তারদের পিপিইসহ সবধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলার পরও তারা আসছেন না। তারপরও আমরা ল্যাব খোলা রেখেছি।

দি সাইনিং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক শহিদুল ইসলাম হান্নান বলেন, আমার ল্যাবে ৩ জন ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখতেন। করোনা ভাইরাসের খবরের পর থেকে গত ২ সপ্তাহ ধরে ডাক্তারেরা চেম্বারে আসছেন না।

অপরদিকে আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী মোহছেন আউলিয়া ল্যাব গত একসপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে ল্যাব পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. নুর মোহাম্মদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে কথা বলার চেস্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয় নি।

শেভরণ আনোয়ারা শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে আনোয়ারার সাধারণ মানুষের যাতে বিঘ্ন না হয় সেই লক্ষ্যে শেভরণ সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দৈনিক ৫-৬ জন ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ডাক্তার এবং রোগীদের জন্য সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবস্থা করছি।

আনোয়ারা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু জাহেদ মোহাম্মদ সাইফুদ্দীনের কাছে আনোয়ারা হাসপাতালে নিয়মিত ডাক্তার না আসা ও আউটডোরের চিকিৎসা বন্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালের জনবল কমানো হয়েছে। তাই আউটডোরের পরিবর্তে রোগীদের জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আনোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযতভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আনোয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার ও রোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে যদি ডাক্তারদের অনুপস্থিতি ও অবহেলা থাকে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!