ওয়াসিম আকরাম, নেয়ামত উল্লাহ ও হাফেজ আলী আজগর— আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের তিন স্বেচ্ছাসেবক। এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা লাশের ধারেকাছেও যখন যাচ্ছে না এমনকি স্বজনরাও, তখন এই সাহসী এই স্বেচ্ছাসেবকরাই করোনা রোগীর লাশ দাফন করাকে তারা জীবনের সবচেয়ে বড় ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। গত তিন মাস ধরে আল মানাহিলের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিদিন কয়েকটি করে লাশের দাফনকাফন সারছেন। যাদের সকলেই হয় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অথবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে।
এই সাহসী কাজটি করতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকে নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ৯ দিনের মাথায় মুক্ত হয়ে তাদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাসেবক ওয়াসিম আকরাম ও নেয়ামত উল্ল্যাহ আবারও ফিরেছেন লাশ দাফনের নিয়মিত কাজে।
অন্যজন হাফেজ আলী আজগর করোনামুক্ত হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বিশ্রামে পাঠিয়েছে মানাহিল। তবে বিশ্রামে থাকা ওই স্বেচ্ছাসেবক জানালেন, খুব শীঘ্রই আবারও লাশ দাফনের কাজে যোগ দিতে চান।
গত ৩ মাস ধরে চট্টগ্রাম করোনায় মৃতদের লাশ দাফনের কাজ করে আসছে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। এই সময়ে মোট ২১১টি লাশ দাফন করেছে তারা। এই কাজে তাদের ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মত তিনজন স্বেচ্ছাসেবক গত ১১ জুন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন।
করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া তিনজনই ওইদিন থেকে মোটেল সৈকতে আইসোলেশনে চলে যান। তাদের মধ্যে দুজনের সামান্য জ্বর-কাশি হলেও আলী আজগরের অবস্থা খানিকটা ভিন্ন ছিল। এই সময়ে জ্বর-কাশি-বমিসহ আরও কিছু জটিলতা দেখা দেয় তার মধ্যে। পরের দফায় দ্বিতীয় টেস্টে তিনজনেরই করোনা নেগেটিভ ফলাফল আসে। করোনামুক্ত হওয়ার পর তাদের মধ্য থেকে দুজন ১৯ তারিখেই লাশ দাফনে অংশ নেন ফের। অন্যদিকে আলী আজগরকে আপাতত পরিবারের সাথে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আল মানাহিলের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন।
হেলাল উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রায় ৩ মাস ধরে লাশের দাফন কাফন করছি। স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকি ছিল তবে আল্লার রহমতে আমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের ৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। যারা সবাই সুস্থও হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে দুজন আবারও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। অন্যজনকে বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে। শীঘ্রই তিনিও আমাদের সাথে আবার যোগ দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশ জোর দিতে হচ্ছে। আমাদের বেশ কিছু পিপিই দরকার। এই বিষয়ে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে বলে আশা রাখি।’
এআরটি/সিপি