রাজীব সেন প্রিন্স :::
জীবন সংগ্রামে পরিশ্রমের সাথে তাল মিলিয়ে ভাজাপোঁড়া সুস্বাধু খাবারের প্রতি ঝোঁক এখন অনেক বেশি সাধারণ মানুষের। ফলে চোখ বুলালেই মিলছে বেকারি আইটেম। আবার কঠোর পরিশ্রম শেষে বা স্কুল কলেজ, অফিস আদালত শেষ করে ক্লান্ত মন যখন ছটফট করে তৃষ্ণায়। তখন ছেলে বুড়ো সব বয়সের মানুষের পছন্দের খাদ্যটি হয় আইসক্রীম।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এসকল চাহিদাকে পূঁজি করে নগরী বা অলি গলিতে গড়ে উঠছে বেকারী কারখানা বা আইসক্রীম ফ্যাক্টরী। যাদের নেই কোন বিএসটিআই বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের কাছে ধরা পড়ে এমনই দুটি কারখানা যার বিবরণে আপনিও বলবেন স্বুস্বাধু খাবারের নামে আসলে আমরা খাচ্ছি কি?
চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানা কোরবানীগঞ্জ ঘাট ফরহাদ বেগ এলাকার বলুয়ার দিঘির পশ্চিম পাড়ে গড়ে উঠেছে পূর্বানী বেকারী নামে স্বুস্বাধু খাবারের এক প্রতিষ্ঠান। যেখানে…
সারি সারি টিনের কোটায় রাখা আছে পোড়া পাম ওয়েল। যা ব্যবহৃত হচ্ছে সুস্বাদু চানাচুর ও বেকারির নাস্তা ভাজায়। অত্যন্ত নোংরা মরিচা পড়া এবং দীর্ঘ ৫ বছরে একবারও পরিস্কার না করা একটা পাত্রে খোলা অবস্থায় প্রক্রিয়া করা হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় ডালডা। আবার সেই ডালডার সাথে বিস্কুটের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মানুষের লোভনীয় ঘি। এসব ঘি ব্যবহৃত হচ্ছে বেকারির বিভিন্ন নাস্তার উপকরণে।
সরাসরি ওয়াসার পানি ব্যবহার করে প্যাকেটের গায়ে পরিশোধিত পানির স্থলে পরিশোধ পানি লিখে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিদিন। ডালডার সাথে চিনি ব্লেন্ড করে বাটার বানিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বেকারীতে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনের নের্তৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় বেকারীর এমন চিত্র ফুটে উঠে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এসব অপরাধ ও অনিয়মের জন্য পূর্বানী বেকারীর ম্যনেজার শিমুল মজুমদারকে দুইমাসের বিনা শ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন।
একই অভিযানে একই স্পটে এমন একটি আইসক্রীম ফ্যাক্টরীর সন্ধান মেলে আইসক্রীম তৈরির মূল উপাদান পানিটিই বিশূদ্ধ নয়। ওয়াসার পানি দিয়েই বানানো হচ্ছে আইসক্রিম। আবার সেই ফ্যাক্টরীটির নাম রাখা হয় এনার্জি আইসবার।
অভিযানকালে আইসক্রীম কারখানায় দেখা যায়- সরাসরি পাম্প দিয়ে ওয়াসার লাইন দিয়ে পানি তুলে আইসক্রীম তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডালডা, চকোলেট পাউডার দিয়ে তৈরি হচ্ছে সকল বয়সের পছন্দের সেই চকবার আইসক্রীম।
সুস্বাধু অনেক আইসক্রীম তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রং ও ঘনিচিনি। আবার সে একই কারখানায় ওয়াসার পানি আর সাইট্রিক এসিড দিয়ে তেতুলের জুস বানানো হচ্ছে। অতচ এসব আইসক্রীম বানানোর কোন অনুমতি বা লাইসেন্স তাদের নেই।
অভিযানে গরমে ক্লান্তি নিবারণে সাধারণ মানুষের পছন্দের এমন সব আইসক্রীম দেখে হতবাক হয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন।
রুহুল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, এনার্জি আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে ক্ষতিকর রং,ঘনচিনি,ডাইরেক্ট ওয়াসার পানি দিয়ে অাইসক্রিম তৈরি করার এনার্জি আইসবারের মালিককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে। এছাড়া এসময় দুই হাজার পিস বিভিন্ন রকম আইসক্রীম এবং ৩০ লিটার পোড়া পাম ওয়েল নালায় ফেলে ধ্বন্স করা হয়।
এর আগে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ঘাট ফরহাদ বেগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পূর্বানী বিস্কিট বেকারির মালিককে দুইমাসের বিনা শ্রম কারাদন্ড দেন জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। পূর্বানী বেকারির বিস্কিট তৈরিতে ব্যবহৃত ডালডার পাত্রটি দীর্ঘ ৫ বছরেও পরিস্কার না করায় এবং ক্ষতিকর সব উপাদান ব্যবহার করায় এ শাস্তি প্রদান করা হয়। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
রিপোর্ট ::: রাজীব সেন প্রিন্স
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::…..