আসামীরা ঘুরছে প্রকাশ্যে! দুই বছরেও শেষ হয়নি চকরিয়ার আলোচিত শিক্ষক নারায়ন হত্যার তদন্ত!

মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া :
অশ্বীন ব্রতের ভাত খেতে এসে নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত শিক্ষক নারায়ন হত্যা মামলার জট খুলেনি দুই বছরও। মামলার তদন্ত ধীরগতিতে হওয়ার পাশাপাশি এই সময়ে চার্জশীট দাখিল হয়নি আদালতে।

chokoria_25194

থানা পুলিশ ক্লো উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি সিআইডির হাতে হস্তান্তর হয়। তারাও কুলকিনারা পাচ্ছেনা। ফলে হত্যায় জড়িত রয়েছে বলে যাদের বিরুদ্ধে গুঞ্জন উঠেছে তারা শিক্ষক নারায়ন পরিবারের সদস্যদের মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকি দিচ্ছে টানা। এতে তার পরিবার সদস্যরা কক্সবাজারের চকরিয়ার দিগরপানখালীস্থ নিজ বাড়ি ছেড়ে পৌর শহরে আশ্রয় নেয়। তবুর ভোগে নিরাপত্তাহীনতায়। ফিরে পাইনি বেদখলীয় জমি। তাই পুরো পরিবারেই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরাঘুরি করলেও নিজ এলাকা ছেড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে হতভাগা পরিবার। তাছাড়া এই মামলায় সরকার দলীয় প্রভাবশালী এক নেতার আত্মীয়রা সংশ্লিষ্ট থাকার গুঞ্জন উঠায় তদন্তে ধীরগতি ও  আদালতে  মামলাটির চার্জশীট দেয়া হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাত ২টার দিকে মুখোশ পরিহিত ১৫-১৬ জনের একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত চকরিয়া পৌরসভার দিগরপানখালীর প্রফুল্ল কুমার দাশের বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ডুকে।

 

এসময় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা বাড়ির জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে বড় ছেলে শিক্ষক নারায়ন কান্তি দাশ বাধা দিতে গেলে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। পরে গুরুতর আহত নারায়নকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্য হয়।
এঘটনায় নিহতের ছোট ভাই জয় শংকর দাশ বাদি হয়ে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর ৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরো ১৫-১৬ জনকে আসামী করে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 

এতে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাজারবিল এলাকার মৃত নজু মিয়ার ছেলে মো.নুরুচ্ছমদ (৬০), একই এলাকার মৃত ছৈয়দ মিয়ার ছেলে মো.শাহ আলম (৩৫), মো.ওসমান (৩২), একই এলাকার মো.নুরুচ্ছমদের ছেলে বেলাল উদ্দিন (৩৫), মো.ফরিদ (৩৪), নুরুল আমিন (৩২) ও উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী এলাকার হাকিম মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ প্রকাশ আজিজসহ আরো ১৫-১৬ জনকে আসামী করা হয়।

 

মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই আসামী মো.নরুচ্ছমদ (৬০) ও মৃত ছৈয়দ মিয়ার ছেলে মো.শাহ আলম (৩৫) কে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসে। তবে এই মামলা অন্য আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাঘুরি করলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জানা গেছে, শিক্ষক নারায়ন হত্যা মামলার ২নং আসামী মো.শাহ আলমকে আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে তিনদিনের রিমান্ডে নেন মামলার তৎকালিন তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই মো.আকতার হোসেন।

 

আসামী মো.শাহ আলম চকরিয়া সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানববন্দি দেন। পরবর্তীতে শাহ আলম আদালত থেকে জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর মামলাটি অজানা কারণে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি সিআইডিতে প্রেরণের দুই বছর অতিবাহিত হলেও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি। এর ফলে মামলাটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

 
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদি জয় শংকর দাশ বলেন, আসামীরা প্রতিনিয়ত মামলা উঠিয়ে নিতে আমকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ভয়ে আমরা নিজ বাড়ি ছেড়ে পৌরসভার চিরিংগা বাসা ভাড়া নিয়ে কোন রকমে দিনযাপন করছি। এমনকি আমার একটা ব্যবসা ছিল সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি। সবকিছু চলে গেলেও আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

 
নিহতের বাবা প্রফুল্ল কুমার দাশ (৮৫) বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নারায়নকে হারিয়েছি। আমার আরেক ছেলে জয় শংকরকে হারাতে চাইনা। সরকারের দলের এক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়রা জড়িত থাকার কারণে মামলাটি এগুচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন প্রশাসনের কাছে একটাই অনুরোধ মৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।

 
এব্যাপারে জানতে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.কামরুল আজম বলেন, মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। সেহেতু মামলাটি সম্পর্কে সিআইডিই ভাল বলতে পারবে।

 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির (এসআই) মো.জাকির হোসেন বলেন, মামলাটি বিভিন্ন আঙ্গীকে বা সূত্র ধরে তদন্ত করছি। এই মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছি এবং আরো ব্যাপক তদন্ত করছি হত্যার সঠিক তথ্য নিশ্চিত হতে । শীঘ্রই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করা হবে।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!