শীত আসলেই অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী, পারকি সমুদ্র সৈকত, কোরিয়ান ইপিজেড লেক ও মেরিন একাডেমি ম্যানগ্রোভসহ উপকূলীয় এলাকাগুলো। পাখিগুলো পর্যটকদেরও বেশ আকৃষ্ট করে। অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেই এটিও হতে পারে পাখির বড় অভয়াশ্রম। তবে শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টির ফলে প্রতিবছর এসব অতিথি পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
সাত সাগর তের নদী পেরিয়ে শীতের আগমনী বার্তায় বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়, খাল, নদী ও বঙ্গোপসাগর উপকূলজুড়েও এসব অতিথি পাখি আশ্রয় নিয়েছে। নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত সমগ্র জনপদ। শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টি আর পরিবেশ দূষণের কারণে ধীরে ধীরে অতিথি পাখি এ জনপদে আগমন কমে আসছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
পাখিপ্রেমীদের জন্য অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে কর্ণফুলী নদী, পারকি সমুদ্র সৈকত, কোরিয়ান ইপিজেডের লেক ও মেরিন একাডেমি ম্যানগ্রোভ। কয়েক কিলোমিটার জায়গা এখন অতিথি পাখির দখলে। শীতের শুরুতে এরা এখানে আসতে শুরু করে। বর্তমানে পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত পুরো এলাকা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকালে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আনোয়ারার উপকূলীয় রায়পুর বার আউলিয়া, পরুয়াপাড়া বাতিঘর, গহিরা, পারকি সমুদ্র সৈকত, কোরিয়ান ইপিজেড, মেরিন একাডেমির ম্যানগ্রোভে, সিইউএফএলসহ এসব এলাকায় নানা পাখ-পাখালির মধুময় কলতান। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ এসব এলাকা। শীত ছাড়া অন্য মৌসুমে হরেকরকম পাখিগুলো কলকাকলিতে সরব থাকলেও শীতে যেন নতুন প্রাণ পায় এ অঞ্চলের পাখিরা।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ শীতে আসা অতিথি পাখির মধ্যে দেখা গেছে কুন্তি হাঁস, জিরিয়া হাঁস, পাতারি হাঁস, রাজ হাঁস, নীলশির, কানি বক, ধূসর বক, সাদা বক, জল ময়ূর, ডুবুরি, পানকৌড়ি, গঙ্গা কবুতর, দলপিপি, কাস্তেচড়া, রাজসরালি, ঈগলসহ নাম না জানা অসংখ্য পাখি।
শীতে কাবু এ পাখিগুলো একটু উষ্ণতা নিতে কয়েক হাজার মাইল দূর থেকে এসব স্থানে ছুটে আসে। শীত মৌসুম শেষ হওয়ার পর অধিকাংশ পাখি ফিরে গেলেও পানকৌড়ি ও বিরল প্রজাতির কিছু বক পাখি এখানেই ঘরবসতি গড়ে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ঘুরতে আসা পর্যটক সাঈদ খান আরজু বলেন, ‘আমি পাখি প্রিয় মানুষ। একসময় বাসায় পাখি পালতাম। গত বছর শীতের সকালে পাখি দেখব বলে এখানে এসেছিলাম। এমন ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির দেখা মেলেনি। তবে এবার সত্যিই এদের দল বেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ানো আর কলকাকলি দেখে ভালো লাগছে।’
কোরিয়ান ইপিজেডের এস্টেজ ইন-ল ম্যানেজার অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শীতের আগেই ইপিজেডের বিভিন্ন লেকে প্রতি বছরের মতো এবারও আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। এসব অতিথি পাখি দেখার জন্য প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ঘুরতে আসছে কেপিজেডে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘অতিথি পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। কারো বিরুদ্ধে পাখি শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এএইচ