বছর ঘুরে সিটিভির সময় বাড়ছে ১২ ঘন্টা, মান কমছে অনুষ্ঠানের

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)’র চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নতুন গতি সঞ্চার হয় ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। এদিন সিটিভি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল টেলিভিশন কেন্দ্র হিসেবে শুরু করে ৪ ঘন্টার স্যাটেলাইট সম্প্রচার। এরপর থেকে বছর ঘুরে বাড়তে থাকে সম্প্রচার ঘন্টা। চলতি বছর ডিসেম্বরে সিটিভি যুক্ত হচ্ছে ১২ ঘন্টার সম্প্রচারে।

তবে বছর ঘুরে সম্প্রচার বাড়লেও প্রচারিত অনুষ্ঠানমালা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের শিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, দর্শক টানতে পারছে না সিটিভি। এই দর্শক খরার জন্য দায়ী করছেন সিটিভির মানহীন অনুষ্ঠানমালা, কোন কোন অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরে কিছু চিহ্নিত লোকজনকে পর্দায় দেখা, শিল্পীদের মধ্যকার বিরোধ, পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচার, চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া তিন পার্বত্য অঞ্চলসহ দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব না দেয়া, ঢাকার অনুষ্ঠানের (বিটিভির প্রচারিত অনুষ্ঠান) উপর নির্ভরশীলতাসহ প্রচারিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কথা তুলে না ধরার বিষয়।

বর্তমান সময়ে সিটিভিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানমালা কতটা মানসম্পন্ন এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ নাট্যকার ও সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান তো হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এখনই যে অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে তার মধ্যে মানসম্মত অনুষ্ঠান খু্বই কম। এছাড়াও সিটিভির অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। এরমধ্যে মেধা বা সৃজনশীলতার ঘাটতি তো আছেই। যে কারণে মানসম্মত অনুষ্ঠান প্রচারে পিছিয়ে পড়ছে সিটিভি।’

তবে সৃজনশীলতার বা মেধার ঘাটতি থাকার ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সঙ্গীত পরিচালক ও গীতিকার বলেন, ‘এখানে গৎবাঁধা অনুষ্ঠান সূচির কারণেই শিল্পীদের সৃজনশীল হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেড়েছে সিটিভির সম্প্রচার ১২ ঘন্টা। যা নিঃসন্দেহে অনেক বড় সফলতা। কিন্তু বিষয়টিকে আমি অনেক বেশি আনন্দের বলে মনে করি না। কেননা ১৯৯৬ সালে উদ্বোধনী সময় থেকেই আমরা এ কেন্দ্রের সাথে যুক্ত আছি। এই টেলিভিশনের প্রতি ওই সময়ের শিল্পীদের যে আগ্রহ ছিল তা এখনকার শিল্পীদের মধ্যে নেই। দর্শক আগ্রহের কথা তো পরের বিষয়।’

চট্টগ্রাম টেলিভিশনে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা ব্যাপারে সঙ্গীত পরিচালক ও গীতিকার ফরিদ বঙ্গভাষী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না সিটিভিতে প্রোগ্রাম করে একজন শিল্পী আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনভাবে লাভবান হয়। অথচ একজন শিল্পীর সঙ্গীত চর্চার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া নয়, পাশাপাশি সে নিজের প্রতিভা বিকাশের জন্যও সঙ্গীত চর্চা করে। এক্ষেত্রে সরকারেরও উদ্দেশ্য বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিভাবান শিল্পীদের তুলে আনা। কিন্তু সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট ব্যর্থ।’

অনুষ্ঠানমালা প্রচারের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শিল্পীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বেতার ও ‍টিভি শিল্পী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন তাহের বলেন, ‘সিটিভির সম্প্রচার ৬ ঘন্টা থেকে ৯ ঘন্টা, এরপর ১২ ঘন্টা সব কিছুই হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংস্কৃতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও কর্তৃপক্ষ ঢাকামুখী। যে কারণে ঢাকার (বিটিভির) পুরাতন অনুষ্ঠান বার বার চালানো হচ্ছে।’

সিটিভিতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যাভিত্তিক বিশেষ কোন অনুষ্ঠান প্রচারিত না হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন,‘কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখছে। এ ব্যাপারে তিনি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের দৃষ্টি আর্কষণ করে বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামের মানুষ। যদি তিনি এ সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রামের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে একটি সঠিক নির্দেশনা দেয়, তাহলে সংকট কেটে যাবে।’

তবে সিটিভির প্রচারিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিযোগীতামূলক সময়ে সরকারের সৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কতটুকু প্রস্তুত সিটিভি সংশ্লিষ্ট মহল এমন শঙ্কা প্রকাশ করলেও বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য্য চট্টগ্রামে প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ১২ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে আমাদের লোকবল আর প্রযুক্তিগত বিষয়ে কিছুটা ঘাটতি আছে, যা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক।’

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যাসহ সামাজিক সমস্যাকে কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হবে নতুন সম্প্রচার ঘন্টায় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,‘চট্টগ্রামের শিল্পীদের গুরুত্ব দিয়েই সিটিভির অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়ে থাকে। তবে সিটিভি কোন আঞ্চলিক চ্যানেল নয়, এটি একটি জাতীয় চ্যানেল সে বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি।’

এএ/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!