আড্ডার ছলে হিযবুতের বৈঠক চলে চকবাজার চান্দগাঁও মুরাদপুরে

চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হিযবুত তাহরীর কর্মী সংগ্রহ করতে টার্গেট করে শিক্ষিত স্মার্ট তরুণদের। নিজ দলে ভেড়াতে এসব তরুণদের সঙ্গে নানা ধাপে নানান জায়গায় আড্ডার ছলে বৈঠক করে। প্রথম দিকে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, খোলা মাঠে আড্ডার ছলে মগজধোলাইয়ের কাজটা করা হয়।

সেই বৈঠকে কোরআন হাদিসের অপব্যাখা দিয়ে ও সরকার বিরোধী মনোভাব যদি টার্গেট তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে। তখনই সাংগঠনিক বড় ভাইদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। বড় ভাইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে সরাসরিই হিযবুতের সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত করা হয়।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হিযবুত তাহরীর সাংগঠনিক নেতা নোভারটিস ফার্মাসিউটিক্যালসের টেরিটরি ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মাহফুজ পুলিশি রিমান্ডে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তার তিন দিনের রিমান্ড শেষে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। এছাড়া কোতোয়ালী থানা পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম মহানগরে মূলত চারটি সাংগঠনিক জোনে ৩৫ থেকে ৪০ জনের নেতাকর্মী রয়েছে। এদের মধ্যে বড় গ্রুপটিই কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। তারা মূলত চট্টগ্রামেরশি শিক্ষা নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে গোপনে সক্রিয় রয়েছে। খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিতে বিভিন্ন উপায়ে সদস্য রিক্রুট করছে তারা। এই কাজে তাদের বিশেষ নজর রয়েছে বিভিন্ন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর সদস্যদের ওপর।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান (আঞ্চলিক প্রধান) আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলমসহ (৩৯) আরও ১৪ জনকে আটক করে পুলিশ। জানা গেছে, এরশাদুল আলম চট্টগ্রামের একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গ্রেফতার ১৫ জনের মধ্যে দুজন বিএনসিসি সদস্যও রয়েছেন। হিজবুতে সক্রিয় থাকা সেই দুই বিএনসিসি সদস্য হলেন কামরুল হাসান রানা ও মো. আরিফুল ইসলাম। দুজনের বয়সই বিশের কোঠায়।

তারা প্রথমে টার্গেট তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন খোলা মাঠ, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, মার্কেটে আড্ডার ছলে বৈঠক করে। তারপর মগজধোলাইয়ের পর বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠলেই বড় ভাইদের বাসায় নিয়ে সাংগঠনিক ট্রেনিং করায়। তারা বিশেষ করে চকবাজারের প্যারেড কর্ণার, কেয়ারি মার্কেট, মুরাদপুরের জামান হোটেল, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, চান্দগাঁও আবাসিক সিডিএ স্কুল মাঠ, মসজিদ মাঠসহ এরকম কোলাহলপূর্ণ জায়গায় বৈঠক করে। যাতে প্রশাসনসহ কারো মনে সন্দেহ না জাগে।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেছেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে কাজ করছে হিজবুত তাহরীর। এছাড়া বিএনসিসির প্রতিও বিশেষ নজর রয়েছে তাদের। এই কাজে শিক্ষার্থীদের রিক্রুটে তারা শিক্ষকদেরও ব্যবহার করছেন।

জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাহফুজের তিন দিনের রিমান্ডে অনেক তথ্য উদ্ধারের পাশাপাশি আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। সহযোগীদের ধরতে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।এছাড়া মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে তদন্তভার দেওয়ার আদেশ হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ১৫ কর্মীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!