‘তুই টাকা খাইয়ে ভাইকে মারালি’/ ভারত থেকে ফেসবুক লাইভে অমিত মুহুরীর ভাইয়ের হুঙ্কার

চট্টগ্রাম কারাগারে পরিকল্পনা করে অমিত মুহুরীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করে নাটক সাজানো হয়েছে—এমনটা দাবি করেছেন অমিত মুহুরীর ছোট ভাই অনিক মুহুরী। অমিতের মুখ অর্ধেক শেইভ করা কেন—এমন প্রশ্ন ভাই অনিকের। শুক্রবার (৩১) মে বিকালে ভারত থেকে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও লাইভে অনিক মুহুরী অনেক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে। তার দাবি, ঘরের মধ্যে বসে পরিকল্পনা করে কোটি টাকায় প্রশাসনকে হাতে নিয়ে ছয়-সাত জন মিলে অমিত মুহুরীকে মারা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কারাগারে খুন হওয়া অমিত মুহুরীর ভারতে অবস্থানরত স্ত্রী নিধি দত্ত চৈতীর ফেসবুক একাউন্টে ১১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ১ জুন রাত ২টা পর্যন্ত তিন হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি দেখেছেন। ভারতে কলকাতার একটি বাড়ির ছাদে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।

ওই ভিডিওতে ‘অমিত মুহুরীকে মেরেছে রিপন নাথ!’—এ কথা বলে বারবার উপহাস ও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে দেখা যায় অনিক মুহুরীকে।

ফেসবুক লাইভে তিনি সবাইকে নমস্কার জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। অনিক মুহুরীর এতে বলেন, ‘অমিত মুহুরী মারা গেছে। রিপন নাথ অমিত মুহুরীকে মারলো! আচ্ছা! রিপন নাথের চেহারা দেখে বোঝা যায়? অমিত মুহুরীকে মারার ক্ষমতা রিপন নাথের আছে? আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি ছিলাম না আমার ভাইয়ের কাছে। আমার ভাইকে মেরেছে যে? রিপন নাথ মেরেছে যে আমার ভাইকে? দেখছি আমার ভাইকে শেইভ করা অবস্থায় মেরেছে। আমার ভাই অর্ধেক শেইভ জীবনে করেনি। আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। আপনারা কখনও শুনেছেন? জেলের মধ্যে মেরে ফেলতে?’

‘তুই যেখানে বসে প্ল্যানিং করলি, সেখানে মারা হবে তোকে’
অনিক মুহুরী বিশেষ কারও প্রতি ইঙ্গিত করে ভিডিওতে বলেন, ‘আপনারা বলবেন, ‘যে যেরকম করেছে; সে রকম শাস্তি পাবে। হ্যাঁ, আমার ভাই তো শাস্তি পাচ্ছিল দু বছর ধরে জেলের মধ্যে। আপনারা কি ভেতরের ঘটনা জানেন? আমার দাদা জুন মাসের ১১ তারিখ বের হতো। তো? রিপন নাথ অস্ত্র মামলায় জেলের মধ্যে ঢুকেছে নাকি। ওরা নাকি জেলের মধ্যে ঢুকে দাদাকে পিছন থেকে মারা হয়েছে, গা হাতে খুর দিয়ে কাটা হলো আমার দাদাকে। রিপন নাথ মারলো আমার দাদার পিছনে? কে মেরেছে? আপনারা বিচার করুন। আমার দাদা যাকে মেরেছে, শাস্তি পাচ্ছিল তো। ও তো ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। ওকে কেন মারা হলো? আমার দাদা কোন দিন অর্ধেক শেইভ করেনি। সবগুলো সাজানো নাটক। অর্ধেক শেইভ করিয়েছে।

তিনি কারাগারের বাইরে খুনের পরিকল্পনা হয়েছিল দাবি করে বলেন, ‘ছয়-সাতজন মিলে পুরো প্ল্যানিং করে আমার দাদাকে মারা হয়েছে। আর যে প্ল্যানিং করেছে, ঘরের মধ্যে বসে বসে, দাঁড়া, ঘরের মধ্যে বসে প্ল্যানিং করে আমার দাদাকে মেরে ফেলবি। নাটক করো? নাটকের দিন শেষ। তুই যেখানে বসে প্ল্যানিং করলি, সেখানে মারা হবে তোকে। অমিতের ছোট ভাইরা আছে। অমিতের ছোট ভাইরা অমিতকে ভালোবাসে।’

‘রাত একটার সময় কেউ শেইভ করতে যায়?’
অনিক মুহুরী বলেন, ‘ছেলেকে মরা অবস্থায় আমার বাবাকে দিচ্ছে। মারলে গুলি করে মার। এভাবে কেউ মারে? আপনারা সবাই এই ভিডিও শেয়ার করুন। যে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তার বিচার চাই আমরা। তার বিচার করুন। যে মেরেছে, তাকে ঘর থেকে বের করে মারুন। সে অন্যায় করেছে; তাকে শাস্তি দিন। আমার ভাই অন্যায় করেছে, শাস্তি পাচ্ছিল। ওকে মেরে কেন ফেললি? প্রশাসন যখন বলছে, জেলের ভিতর মেরেছে।’ প্রশাসন কেন কিছু বলছে না? জেলের ভিতরে ইট কোথা থেকে আসে? জেলের মধ্যে কি ইটের ব্যবসা হয়? এটার জবাব দাও। এতো বড় নাটক সাজিয়েছো? জেলের মধ্যে সিসি ক্যামেরা থাকে। ক্যামেরা ফুটেজ বের কর। তোমরা প্রশাসন যদি ঠিক থাকো, তাহলে এটার প্রুভ বের করো। কার হাত ছিল এটা বের কর। আমার ভাই ভালো হয়েছিল। ১১ তারিখ আমরা ভাই বের হতো। এই খবর ওপর লেভেলে গেছে। আমার বাবা আমাদেরকেও বলেনি যাতে কারো কানে চলে যাবে। ১১ তারিখ বের করে ইন্ডিয়া নিয়ে আসতো। কিন্তু কী অপরাধ করলো আমরা দাদা? একটা জেলের মধ্যে এভাবে হত্যা কি করে করে? প্রশাসন কি করছিল তখন? রাতের একটার সময় নাকি আমরা দাদা শেইভ করছে! রাত একটার সময় কেউ শেইভ করতে যায়? রাত একটার সময় কখনো জেলে শেইভ করায়? জেলের মধ্যে শেইভ করার টাইম দুপুর দুটোয়। তার মানে দুপুর দুটোর সময় আমার দাদাকে মেরেছে।

‘আমি করবো বিচার। দেখবো কে কার বাপ’
বিশেষ কারও প্রতি ইঙ্গিত করে অনিক মুহুরী আবার বলেন, ‘যে ঘরের মধ্যে বসে প্ল্যান করে কোটি টাকা খরচ করে আমার দাদাকে মারিয়েছে, তার বিচার চাই।

ক্ষোভমেশানো কান্নায় তিনি বলেন, ‘আসছি, বাংলাদেশ আমি আসছি। আমি আসছি। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার যদি কেউ না করে, প্রশাসন থেকে যদি বিচার না পাই, আমি করবো বিচার। দেখবো কে কার বাপ। আয়। তুই ঘরে বসে প্রশাসনকে দিয়ে টাকা খাইয়ে আমার ভাইকে মারালি। আপনারা সবাই এটার বিচার করুন। আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। মেরে আমার বাবাকে ফোন করেছে। যখন জান ছিল তখন কেন দেয়নি। আপনার বলুন, জেলের মধ্যে কী করে মারে? বাইরে ক্রসফায়ারে যদি মেরে ফেলতো; তাহলে মনকে বোঝাতে পারতাম। আমার দাদার সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই রিপন নাথের। ওই ছেলে নাকি আমার দাদাকে মেরে ফেলেছে? কে করিয়েছে সবাই জানে। এটা তদন্ত করা হোক। কে ঘরে বসে আমার দাদাকে মারলো? কোটি টাকা খরচ করলো। তাকে ঘর থেকে বের করে মারা হোক। প্রশাসন তার শাস্তি দিক। আমার বাবা যখন কেইস করতে গেলো, পুলিশ কেইস নিচ্ছে না। পুলিশকে এমনভাবে হাত করে রাখলো- পুলিশ কেইস নিচ্ছে না। আমরা বাবা হাইকোর্টে গিয়ে কেইস করলো। পুলিশ কেইস নিচ্ছে না। আপনারা এটার বিচার করুন।’

বাবা বললেন…
ভিডিওটি সম্পর্কে শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে অমিত মুহুরীর বাবা অরুণ মুহুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাই তো। ভাই হত্যার বিচার চাইবে না ভাই?’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!