ছুরি নিয়ে কারখানা জিম্মি করেছিলেন কারাগারে অমিত মুহুরীর খুনি রিপন

দেড় মাস আগে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর একটি পোশাক কারখানা ছুরি নিয়ে জিম্মি করার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী অমিত মুহুরীর খুনি রিপন নাথ। পেশায় পোশাক কারখানার কর্মী রিপন চট্টগ্রামের অপরাধজগতে আলোচিত কেউ ছিলেন না। বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে ৩২ নম্বর সেলে থাকা রিপন নাথের বন্দি নম্বর ৭১৩২/১৯।

অস্ত্র আইনের ১৯ (এফ) ধারা এবং ৩৬ (১) ১০ ধারায় রিপন নাথের বিরুদ্ধে দুটি মামলার খোঁজ মিলেছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায়। এর একটির নম্বর ১৯ (৪) ১৯ এবং অন্যটি ২০ (৪) ১৯।

রিপন নাথ সীতাকুণ্ড উপজেলার ফেদানগর এলাকার হেমন্ত সরকার বাড়ির মৃত নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, বুধবার ইফতারের পরই সন্ত্রাসী অমিতের সঙ্গে রিপন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কী নিয়ে সংঘর্ষের সূচনা তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। এ সময় সন্ত্রাসী রিপন তার মাথায় অসংখ্য আঘাত করে। কারা কর্তৃপক্ষ শুরুতে নিজেদের বাঁচাতে ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা করে। এতে প্রাথমিকভাবে কারাগারে চিকিৎসা দিয়ে গোপনে অমিতকে সুস্থ করার চেষ্টা চালান কারা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েই কারাগারে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে চমেক হাসপাতালের নেওয়ার পরামর্শ দেন। কারাগার থেকে অমিতকে রাত ১১টায় বের করা হয়। আর ততক্ষণে অমিতের মৃত্যু হয়।

এদিকে ঘটনার পরপরই রিপন নাথকে চট্টগ্রাম কারাগারের একটি নির্জন সেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষের কাস্টডিতে বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিপনের বিরুদ্ধে মামলার পর পুলিশ তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখাবে বলে সূত্র জানায়।

অমিত কি রিপনের বন্ধু ছিল?
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাত দুটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সামনে চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রতিবেদককে অমিত মুহুরীর পিতা অজিত মুহুরী বেশ কয়েকবার বলেছেন, ‘রিপন তো অমিতের বন্ধু ছিল।’ বন্ধুই যদি হয়ে থাকে, কারাগারের ভেতরে কেন তারা প্রাণঘাতি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল – চট্গ্রাম কারাগারের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

যা ঘটেছিল ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায়
রিপন নাথ (২৩) ছুরি নিয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এলাকায় অর্গানিক জিন্স নামে একটি পোশাক কারখানা জিম্মি করার ঘটনা ঘটান গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায়। ওই সময় তিনি হাতে থাকা কাগজে মোড়ানো একটি ছুরি নিয়ে কারখানায় ঢুকে পড়েন। কারখানার নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে বাধা দিলে এক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে তার ধস্তাধস্তিও হয়। পরে তিনি কারখানার কনফারেন্স রুমে ঢুকে যান। তখন রুমে পোশাক ক্রেতাদের সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তাদের সভা চলছিল। এ অবস্থায় রিপন রুমে ঢুকে তার হাতে থাকা ছুরি নিয়ে সবাইকে জিম্মি করে ফেলেন।
খবর পেয়ে পাহাড়তলী থানা পুলিশের একটি টিম কারখানায় ছুটে আসে। সবাই মিলে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেও কিছুতেই সে তা শুনছিল না। উল্টো রুমে থাকা কয়েকজনকে হত্যার হুমকি দিতে থাকে সে। নানাভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে তাকে তার পছন্দসই খাবার খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে রাজি হলে তাকে চাহিদামতো খাবার সরবরাহ করা হয়। পরে কৌশলে পুলিশ তার ছুরিটি জব্দ করে তাকে আটক করতে সমর্থ হয়।

এই ঘটনায় কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এমনকি নিরাপত্তাকর্মীরাও ভীত হয়ে পড়ে। এতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ ছিল কারখানার কাজকর্ম।

অর্গানিক জিন্সের জেনারেল ম্যানেজার শরীফ হোসেন বলেন, রিপন নাথ অর্গানিক জিন্স কারখানার কর্মী ছিল। গত বছরের এপ্রিল মাসে সে কারখানায় যোগদান করে। চাকরিকালীন অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদে জড়াতো। অনেক সময় সহকর্মীদের মারধর করতে চাইতো। এতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ চাকরির দেড় মাসের মাথায় তাকে অব্যাহতি দেয়।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!