ভিডিও/ কোটি টাকার চুক্তিতে কারাগারের ভেতরে অমিত মুহুরীকে হত্যা—দাবি পিতা অরুণের

অন্য কারাগারে চলে যেতে চেয়েছিলেন অমিত

হত্যার শিকার হতে পারেন—এমনটি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে খুন হওয়া আলোচিত সন্ত্রাসী অমিত মুুহুরী। তার পিতা অরুণ মুহুরী দাবি করেছেন, জেলখানায় পরিকল্পিতভাবে অমিত মুহুরীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

‘মনে হয়েছে, অমিত দুুপুুরবেলায় মারা গেছে’
বৃৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাশ ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অমিত মুহুরীর পিতা অরুণ মুহুুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলখানা থেকে একজন মোবাইলে ফোন করে বলেছে, জেলখানায় মারামারি হয়েছে। অমিতের ইনজুরি হয়েছে। চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পাঁচ তলায় আছে। রাত একটার দিকে আমরা তাড়াহুড়া করে আসলাম। হাসপাতালে দেখি, ওকে কোন বেডে দেয় নাই। মাটির উপর শোয়ায় রাখছে। একটা স্যালাইন হাফ ঝোলানো, স্যালাইন চলছে না। সারা শরীর রক্ষাক্ত, মাথায় ব্যান্ডেজ। মুখ অর্ধেক শেভ করা, অর্ধেক শেভ ছাড়া। শরীর দেখে মনে হয়েছে, অমিত দুুপুুরবেলায় মারা গেছে। ডাক্তাররা তাকে অনেক আগেই মৃত ঘোষণা করে দিয়েছেন।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকে কান্নায় ভেঙে পড়েন অমিত মুহুরীর বাবাসহ স্বজনরা। ছবি: কমল দাশ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকে কান্নায় ভেঙে পড়েন অমিত মুহুরীর বাবাসহ স্বজনরা। ছবি: কমল দাশ

‘‘মৃত এটাকে এখানে এনেছেন কেন?’’
জেলখানায় অমিতকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হয়েছে এবং পুরো জেলখানার কর্মকর্তারা এতে জড়িত আছেন এমন দাবি করে অরুণ মুহুরী বলেন, ‘জেলখানা তো নিরাপত্তার জায়গা। সুরক্ষিত রাখার জন্য জেলখানাটা দেওয়া। সে অপরাধী, তাকে ফাঁসি দেবে, সাজা দেবে। এটা তো জেল কর্তৃৃপক্ষের দায়িত্ব নয়। এটা করবে আদালত। জজ আছে, আইন আছে দেশে।’

কারাগার কর্তৃৃপক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করে অরুণ মুহুরী বলেন, ‘এখন আইনবহির্ভূত কাজ করলো কেন ওরা? কে মারলো? আমরা তো দেখিনি। আমাদেরকে সাথে সাথে খবরটা দিলো না কেন? অমিতকে জেলখানায় মেরে ফেলার পর মেডিকেলে আনলো কেন? আনলো, তাও নিচে ফ্লোরে ফেলে রেখেছে। কোন ডাক্তার অমিতকে দেখেনি। ডাক্তার বলেছেন, ‘‘মৃত এটাকে এখানে এনেছেন কেন?’’ লোকজন বলছে, ‘‘ফর্মালিটি বজায় রাখতে হয়।’’

সামনে অমিতের জামিন হতে পারে। এতে মামলার নতুন কোন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। তাই অমিতকে হত্যা করা হয়েছে—এমনটা মনে করেন অমিতের পিতা। তিনি বলেন, ‘একটু শোনা যাচ্ছিল যে, ওর জামিন হতে পারে। এ অবস্থায় অমিতকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

‘ওরা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে’
নিজের মৃৃত্যুর কথা আগেই জেনে গিয়েছিল অমিত—দাবি পিতা অরুণ মুহুরীর। তার ভাষ্যমতে, ‘কিন্তু অমিত জানতো। অমিত নিজেই বলেছে, ‘‘আমাকে মেরে ফেলবে। ওখানে লাখ লাখ টাকার অফার আসছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করছে। আমাকে অন্য জেলখানায় হস্তান্তর করা হোক।’’ কিন্তু আমরা ওইটা আমল করিনি। আমরা ওইটা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ওকে কে মারবে? ও এমন কী হয়েছে যে ওকে মেরে ফেলবে? কিন্তু কোটি টাকা নাকি ওর জন্য ঢালবে। এ রকম অফার অন্যজনের কাছে গেছে। এটা অমিতের কানে গেছে। ওর কথাগুলো আমরা বুুঝতে পারিনি। কানেও নিইনি। কিন্তু আগাম বার্তা সব ও জানতো।’

‘আমরা চেয়েছিলাম অমিত জেলখানায় থাক, সুুরক্ষায় থাক। নিরাপদ জায়গা। বের হওয়ার কোন দরকার নেই। ওখানে থাক, ভালো থাক। আমরা এটা চেয়েছিলাম। কিন্তু ভালো থাকার জায়গায় যে পিছন থেকে মারবে, এভাবে হত্যা করে ফেলবে—এটা আমরা কল্পনাও করিনি।’

অরুণ মুহুরী বলেন, ‘আমি চাই, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হোক। জেল কর্তৃপক্ষ কী করেছে? এতো সুরক্ষার ভিতর, এতো বেষ্টনীর ভিতরে কে গিয়ে আমার ছেলেকে আঘাত করলো? কী দিয়ে আঘাত করলো? ওরা বলছে, ‘‘ইট দিয়ে’’। আমি তো দেখেছি, এটা অনেক বড় আঘাত। জায়গার মধ্যেই ওকে মেরে ফেলেছে।’

‘যদি অমিত বেরিয়ে যেতো, হয়তো কারো ক্ষতি হতো’
‘প্রশাসনের কাছে ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি—সুরক্ষার জায়গায় রক্ষক কেন ভক্ষক হবে? আইনে যা সাজা হওয়ার তা হতো। অমিতকে কেন মেরে ফেলা হলো? এটা তো একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড আমি মনে করি। অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করে অমিত হত্যা করা হয়েছে। অমিত হয়তো বেরিয়ে যাবে—এই আশঙ্কা তাদের মধ্যে ছিল।’

‘অমিত বেরিয়ে এলে মামলার নতুন কোন তথ্য আসতে পারে—এ আশঙ্কায় তাকে হত্যা করা হল। যদি অমিত বেরিয়ে যেতো, হয়তো কারো ক্ষতি হতো। এ চিন্তাভাবনা ছিল হত্যাকারীদের।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!