পিডিবির ১০০ কোটি টাকা শোধ করছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সেবাদানকারী সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এই সংস্থাটির রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস গৃহকর। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বড় অভিযোগ সরকারি সংস্থাগুলো নিয়মিত গৃহকর পরিশোধ করে না। তবে সরকারি অন্য সংস্থার পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করে থাকে চসিক নিজেও। চসিকের কারণে বিপাকে পড়ে সংস্থাগুলো। তবে কোন সংস্থাই সেটা নিয়ে প্রকাশ্য অভিযোগের সাহস করে না। এমন একটি সেবাদানকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিতরণ দক্ষিণ অঞ্চল চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনার বিদ্যুৎ হিসাবের বিপরীতে বিল বাবদ বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে। বিল পরিশোধের জন্য পিডিবি’র ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীরা বারবার চিঠি দিলেও বকেয়া পরিশোধ করছে না চসিক। চসিকের স্থাপনা ও রাস্তার বাতির হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া থাকায় বোর্ড নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না পিডিবি বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল চট্টগ্রাম।

জানা যায়, পিডিবি বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের অধীনে মোট ১৪টি ডিভিশন আছে। এর মধ্যে একটি ডিভিশন হচ্ছে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- পাথরঘাটা চট্টগ্রাম। চসিক থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেবল এই ডিভিশনের মোট বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পাওনা আছে ১২ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬২ টাকা। এর মধ্যে স্থাপনার বিপরীতে ২০টি হিসাবে বকেয়া পাওনা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২০ টাকা এবং সড়ক বাতির ৬১টি হিসাবের বিপরীতে বকেয়া পাওনা ৮ কোটি ৭২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৮ টাকা।

পিডিবি’র প্রকৌশলীরা জানান, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- পাথরঘাটা চট্টগ্রামের মতো মোট ১৪টি ডিভিশনের অধীনে স্থাপনা ও সড়ক বাতির হিসাবের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পাওনা আছে চসিকের কাছ থেকে। যার পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপরে।

জানা যায়, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য গত ১৮ মার্চ চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দাপ্তরিক পত্র দিয়েছেন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- পাথরঘাটা চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেন। পত্রে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে কামাল হোসেন বলেন, ‘আগে স্থাপনার বিলগুলি নিয়মিত পরিশোধ হলেও ইদানিং স্থাপনার বিলও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পরিশোধিত হচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ বকেয়া অনাদায়ী থাকায় সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করা দূরূহ হয়ে পড়ছে।’

ওই পত্রে সঠিক বিদ্যুৎ সেবা প্রদানের স্বার্থে সমস্ত বকেয়াসহ হালনাগাদ বিদ্যুৎ বিল ২৭ মার্চের মধ্যে পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন কামাল হোসেন।

পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, অন্যথায় বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে কোন স্থাপনার জানমালের ক্ষতি হলে পিডিবি কোন দায়-দায়িত্ব বহন করবে না।

বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য এর আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবরও চসিককে পত্র দিয়েছিলেন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- পাথরঘাটা চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেন।

এই বিষয়ে কামাল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য চসিককে আমরা প্রতি মাসে পত্র দিয়ে থাকি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। চসিক নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সে অনুসারে কাজ করা হবে।’

তবে ফেব্রুয়ারি মাসে চসিক ৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে বলে জানান কামাল হোসেন।

চসিক থেকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজি নয় পিডিবি বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া থাকে। চসিক কিছু কিছু পরিশোধ করছে।’

পিডিবি’র বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন পিডিবির বড় গ্রাহক। তাই বকেয়া থাকতেই পারে। আমাদের কাছে বেশ কিছু বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। আমরা চেষ্টা করছি পরিশোধ করার জন্য।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!