২ অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ছে চট্টগ্রামের বাজারে

পরিবহন সংকট ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে— অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তবে রমজানকে উপলক্ষ করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠলেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজান আসলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। শবে বরাত থেকে শুরু হয় পাইকারি বাজারে বেচা-কেনার ব্যস্ততা। কিন্তু চলতি বছর চিত্র ভিন্ন। কারণ নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক কার্যক্রম শ্লথ করে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। গত তিন সপ্তাহ ধরে দেশে লকডাউন চলছে। ফলে ভোগ্যপণ্য স্বাভাবিক সময়ের মতো পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। অনেকটা বন্ধ আছে আমদানি কার্যক্রমও। পাইকারদের হাতে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য মজুদ থাকলেও শবে বরাতের আগে ক্রেতাও পাননি। তবে এখন রমজান ঘনিয়ে আসায় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে দাম।

রমজানকে সামনে রেখে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এখন সরগরম। কিন্তু শ্রমিক ও গাড়ি সংকটে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের একাধিক আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। একই সঙ্গে সমসংখ্যক ট্রাক পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে চেনা বাজারটির চিত্র ভিন্ন। নেই আগের মতো পণ্যবাহী গাড়ির জট।

ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্য নিয়ে আগে যে গাড়ি ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় পাওয়া যেতো, এখন সেটি লাগছে ১০ হাজার টাকা। সেই সাথে লোড-আনলোডে শ্রমিকদের বেতনও দ্বিগুণ। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে খুচরা মূল্যের ওপর।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, গণপরিবহন বন্ধ। একই সঙ্গে ট্রাক বোঝাই ও খালাসে নিয়মিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কর্মস্থলে নেই। বিশাল বাজারটিতে হাতেগোনা কয়েকশত শ্রমিক কাজ করছে। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এদিকে পরিবহন সংকট থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য সরবরাহ যেমন হচ্ছে না, একইভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত পণ্যও আসছে না। ফলে ভরা মৌসুমে উভয় সংকটে আড়তদারা।

এ বিষয়ে চক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লকডাউন শুরুর পর থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা কমে গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। আর পুরানো ক্রেতার টেলিফোনে কেনার ফরমায়েশ দিলেও বকেয়া পড়ার শঙ্কায় পণ্য বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না পাইকাররা।’

তিনি বলেন, ‘এদিকে ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। অধিকাংশ শ্রমিক বাড়ি চলে গেছেন। আর যারা শহরে আছেন, তারাও কাজ করছেন না। এতে পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। ফলে পণ্য সরবরাহের যে চাহিদা রয়েছে, শ্রমিক সংকটের কারণে তাও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’

অন্যদিকে ক্রেতা সংকট থাকায় কিছু পণ্যের দাম কমলেও করোনার প্রভাবে চাল-ডালসহ নিয়মিত কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ৫০ কেজির প্রতিবস্তা মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। একইসঙ্গে আদার দাম ৩০ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। পেঁয়াজ ও রসুনের দামও কিছুটা বেড়েছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫০ থেকে ৬০টাকা বিক্রি হচ্ছে; রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।

তবে এখনও ছোলার দাম বাড়েনি। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে চিনি প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৪০ টাকায়। পাম তেল মণপ্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া রমজান উপলক্ষে আরও কিছু ডাল জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।

তবে কিছুটা দাম কমেছে সয়াবিন তেলের। প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডাসের কর্ণধার ও ডাল ব্যবসায়ী সোলাইমান বাদশা বলেন, রমজান মাসে এক লাখ টনের উপরে ছোলার চাহিদা রয়েছে। সেই অনুপাতে মজুদও আছে। এর মধ্যেই চাহিদা বাড়ায় দামও দুই এক টাকা বেড়েছে।

একই সঙ্গে রমজানে স্থানীয় পর্যায়ে খুচরা বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। আর পাশের দেশ থেকে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়। যা বর্তমানে বন্ধ। আমদানি শুরু না হলে কিছুদিনের মধ্যেই একাধিক পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কারণ বেশিরভাগ মসলা জাতীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়।

খাতুনগঞ্জের তেল-চিনির ডিও ব্যবসায়ী মো. আলমগীর পারভেজ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হবেন। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যাবেন। ইতোমধ্যে তেল-চিনির দাম কমেছে। একইসঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতে স্বাভাবিক গতি ফিরে না আসলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারাবে।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো যাবে না। সিন্ডিকেটের সাথে কোন ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!