২৫০ কোটি টাকার ফ্যাক্টরি ‘পানির দামে’ বেচলো বেপজা, অনিয়মের অভিযোগ

এঅ্যান্ডবি আউটওয়্যার লিমিটেড, নরম আউট ফিল এবং এম/এস কোল্ড প্লে স্কুল প্রোডাক্টস লিমিটেড। চট্টগ্রাম ইপিজেডের এসব প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী নাজমুল আবেদীন। প্রায় ২৪ বছর ধরে সিইপিজেডে কারখানা স্থাপন করে পণ্য প্রস্তুত করে আসছে এসব প্রতিষ্ঠান।

২০২০ সালের করোনার প্রার্দুভাবে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যায় বন্ধ হয়ে যায় সব পোশাক কারখানাও। এই কঠিন সময়ে শ্রমিকের দুই মাসের বেতন, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটির (বেপজা) প্লট ভাড়া, সার্ভিস ও অন্যান্য চার্জসহ মোট দুই কোটি টাকা বকেয়া থাকায় তার তিনটি প্রতিষ্ঠানের ইজারা বাতিল করে দেয় বেপজা। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের মালিকের অনুমতি ছাড়াই তার প্রতিষ্ঠানগুলো নিলামে তুলে বেপজা বিক্রি করে দেয়।

জানা যায়, ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ২০ দিনের জন্য সারাদেশের পোশাক কারখানার ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ২৬ মার্চ থেকে দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় জানুয়ারি মাসের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা ছিল।

এরপর ওই বছরই রোজা, ঈদের সব ধরনের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে নাজমুল আবেদীনের মালিকানাধীন তিন প্রতিষ্ঠান। ওই বছরের ৭ জুন কোনো নোটিশ ছাড়াই একতরফাভাবে তার তিন প্রতিষ্ঠানের প্লটের ইজারা চুক্তি বাতিল করে চিঠি দেয় বেপজার জেনারেল ম্যানেজার (আইপি) তারভীর হুসাইন। একে একে বিক্রি করে দেয় তার তিনটি প্রতিষ্ঠানও।

নিয়ম অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ বডির মিটিংয়ের রেজুলেশন পাশ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের প্লটের ইজারা বাতিল করতে পারে না বেপজা। করোনাকালীন সময়ে সরকারি ও বেসরকারি সব অফিসের কার্যক্রম স্থবির ছিল বিধায় বেপজার এক্সিকিউটিভ বডির মিটিং হওয়ারও সুযোগ ছিলনা। অথচ করোনাকালীন এসব নিয়ম না মেনে সিইপিজেডের অনেক পোশাক কারখানার ইজারা বাতিলের পাশপাশি কারখানাও বিক্রি করে দেয় বেপজা।

নাজমুল আবেদীন জানান, ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। পরবর্তীতে নাজমুল আবেদীনের পক্ষে রিটের সব ধরনের কাগজপত্র ডাকযোগে ও সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বেপজা কর্তৃপক্ষকে। ওই সময় এসব কাগজ উপেক্ষা করে প্লট ইজারা বাতিলের পাশাপাশি গোপনে নিলামের মাধ্যমে ‘কন্ডা’ নামের একটি বিদেশি কোম্পানির কাছে চুক্তিও সম্পাদন করে বেপজা কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, তার তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এঅ্যান্ডবি কারখানা ১৮ কোটি টাকা, নরম আউট ফিল ৬ কোটি এবং কোল্ড প্লে নামীয় কারখানাটি বিক্রি করেছে ৪ কোটি টাকায়। অথচ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া একাধিক সিইপিজেডের পোশাক কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনায় নতুন করে অর্ডার না পাওয়ায় এবং আগের অর্ডারের মালামাল সময়মতো ডেলিভারী দিতে না পারায় বকেয়া বেড়ে যায় অনেক প্রতিষ্ঠানের। ইপিজেডের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে ফ্যাক্টরি চালু করেছে। এছাড়া কাজ না থাকায় বেপজার ইউটিলিটি চার্জ, ব্যাংক ঋণের বোঝা ভারি হওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে এ এন্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেডের কর্মকর্তা নয়ন বলেন, ‘হাইকোর্ট আমাদের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ২ কোটি টাকার অর্ধেক টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। পরে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের কাগজপত্রসমূহ ডাকযোগে ও সরাসরি পাঠালেও বেপজা থেকে কোনো ধরনের সহযোগি পাইনি। সেখানকার একটি বড় চক্রের ইচ্ছায় আমাদের তিনটি ফ্যাক্টরি নিলামে তুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ তারা বিক্রি করে দেয় মাত্র ২৮ কোটি টাকায়।’

তিনি বলেন, ‘বেপজা তাদের অফিসের লোকজন পাঠিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা দুটি গাড়িও জব্দ করে নেয়। সরকারি আদেশের কোনো কাগজপত্র, সিজার লিস্ট না দিয়ে বেপজার নিরাপত্তা কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মালিকের দুটি গাড়ি নিয়ে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বেপজার জেনারেল ম্যানেজার মসিউদ্দিন মেজবাহ বলেন, ‘আদালতের কোনো কাগজপত্র আমরা পাইনি। তাদের তিনটি ফ্যাক্টরি মধ্যে দুইটি ফ্যাক্টরি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। সম্প্রতি নাজমুল আবেদীন কোল্ড ফ্যাক্টরিটিও বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া করোনায় ব্যবসার মন্দাভাব কেটে উঠতে না পারায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!