নগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবি, যেখানে নগরের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। প্রচণ্ড গরমেও যে স্থানটিতে তাপমাত্রার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় শুধুমাত্র বর্ষীয়ান গাছগুলোর জন্য। এখানে এখনও বেঁচে রয়েছে জীব-বৈচিত্র্য, রয়েছে হেরিটেজ ঘোষণা করা নান্দনিক স্থাপনা। এই সিআরবিতেই অবস্থিত ঐতিহ্য ঘোষিত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক দ্বিতল সড়ক। এই সড়কের ওপর সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের প্রস্তুতি নিতে ৪২টি গাছ চিহ্নিত করেছে কাটার জন্য। যার মধ্যে ছিল শতবর্ষী গাছও। এই সংস্থা কেমন করে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়! সিআরবিতে র্যাম্প হলে জীব-বৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হবে। দ্বিতল এই সড়ক অভিমুখে র্যাম্পের কোনো দরকার নেই বলে জানিয়েছেন স্বনামধন্য স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদরা। আমাদের দাবি, সিডিএ যেন দ্বিতল সড়ক অভিমুখে র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন, চট্টগ্রাম। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের এসব কথা জানানো হয়। র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আগামী ২৭ এপ্রিল বিকাল ৪টায় নাগরিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, একটা গাছ কাটার সঙ্গে অনেকগুলো প্রাণীর জীবনচক্র থেমে যায়। যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনার সময়েই সিডিএ স্বীকার করেছিল, এটা দিয়ে দুই শতাংশের মতো ভিআইপি-সিআইপি যাতায়াত করবেন। তা সত্ত্বেও এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে, টাইগারপাসের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে নষ্ট করে। চাইলে র্যাম্প দেওয়ানহাটে নির্মিত প্রায় যানবাহনহীন ফ্লাইওভারটির সঙ্গে লিংক করিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না, কারণ হতে পারে এখানে অনেকেই বড় দুর্নীতিমূলক আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যার ঐতিহ্য রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। সবুজে ছাওয়া এ শহরের সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে অতি দ্রুত। পাহাড়গুলো চোখের পলকে নাই হয়ে যাচ্ছে। দীঘি-পুকুরের শহরে এখন বেঁচে আছে কিছু ডোবা। আমাদের অবহেলায় হারাতে বসেছি সব। সিআরবির দ্বিতল সড়কের ওপর বা আশপাশে র্যা ম্প হলে জীব-বৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হবে। মানুষের মানসিক প্রশান্তির জায়গাটুকু নষ্ট হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখবে না এমন প্রাকৃতিক ও নান্দনিক সৌন্দর্য। এই র্যাম্পের বিকল্প আছে, তাই এখানে প্রকৃতি তার মতোই থাকুক, কংক্রিটের স্থাপনা অন্য কোথাও হোক।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনায় ছিলেন সংগঠক ডা. মো. মনজুরুল করিম বিপ্লব। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠক রিতু পারভী। উপস্থিত ছিলেন ডা. ইমরান বিন ইউনুস, প্রফেসর শফিক হায়দার, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া ও ডা. মাহফুজুর রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠক আবু সুফিয়ান ও জাহেদুল আলম।
আরও উপস্থিত ছিলেন সৌরভ চৌধুরী, তোফাজ্জেল অভি ও সোহাইল উদ দোজা এবং বেলা’র প্রতিনিধি মনিরা পারভীন ও কবি ফারহানা আনন্দময়ী।
ডিজে