শীতে জড়োসড়ো নগরী, হাসপাতালে রোগীর ভিড়

চট্টগ্রামের জন্য এখনও বরাদ্দ হয়নি শীতবস্ত্র

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে হঠাৎ জেঁকে বসা শীতে ছন্দপতন ঘটেছে নগরজীবনে। শীতে থাবায় খুব জরুরি কাজ ছাড়া ঘর ছেড়ে বের হচ্ছে না কেউ। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন শ্রেণির পেশাজীবীরা।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশন, বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড, লালদীঘিপাড় সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, ছেঁড়া কাঁথা মুড়িয়ে শত শত ছিন্নমূল শীতের থাবা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। শীতের কারণে মানুষকূলের মত কাঁপছে পাখ-পাখালিও। শীতের থাবা থেকে গৃহপালিত পশুকে বাঁচাতে পশুর শরীরে মোটা কাপড় ও চট পড়িয়ে দিতেও দেখা গেছে।

তবে রোববার (২২ ডিসেম্বর) থেকে শীতের দাপট কিছুটা কমে এসেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে চলতি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আসতে পারে আরও দু’টি শৈতপ্রবাহ। সেই সঙ্গে চলতি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রয়েছে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আগামী ৭২ ঘন্টার শেষের দিকে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম থাকলেও আকাশ মেঘাছন্ন থাকতে পারে। আবারও শীতের দাপটে কাবু হতে পারে চট্টগ্রাম নগরী।

সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহিম জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ এবং জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ আরও দু’টি শৈতপ্রবাহ আসতে পারে। তবে আগামী দু’দিন তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি বেড়ে শীতের দাপট কমতে পারে কিছুটা।

দিনমজুর রহিম আলী বলেন, তীব্র শীতের কারণে কাজে বের হতে পারছি না। কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমানোর সুযোগ নেই। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করি, তাই এই শীতে কষ্টে পড়ে গেছি।

তবে অন্যান্য দেশের উত্তরাঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে শীতের তীব্রতা কম থাকলেও দুর্ভোগের সীমা যেন ছাড়িয়েছে বসতভিটাহীন ছিন্নমূলের জন্য।

তবে শীতের তীব্রতা যেন নতুন গতি পেয়েছে গ্রামীণ জনপদে। শীতের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বের হতে পারেনি জীবিকার কাজে। গ্রামীণ জনপদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শীতে জড়োসড়ো নগরী, হাসপাতালে রোগীর ভিড় 1

এদিকে হতদরিদ্র ও শীতার্তদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১২ হাজার ৩০০টি কম্বল এবং শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র কিনতে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার জন্য ৮ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে দেশের বিভিন্ন এলাকার জন্য শীতবস্ত্র, কম্বল ও শুকনা খাবার কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ দিলেও চট্টগ্রামের জন্য কোনও বরাদ্দ দেয়নি সরকার।

হতদরিদ্র ও শীতার্ত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় নিয়ে দুর্যোগ ব্যস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান রোববার (২২ ডিসেম্বর) এই বিশেষ বরাদ্দ দেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রামে আড়াই হাজার, দিনাজপুরে ২ হাজার, ঢাকার সাভার পৌরসভার জন্য ২ হাজার, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডের জন্য ৫০০, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য ৩০০ এবং সুনামগঞ্জের জন্য পাঁচ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিটিতে এক লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা শিশুদের শীতবস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এদিকে প্রচন্ড শীতে দাপটে দেখা দিয়েছে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামে ডায়রিয়ায় ৪ শতাধিক এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে প্রায় দেড়’শ রোগী আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল সহ নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে হুড়মুড়িয়ে বাড়ছে শীত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এসব হাসপাতালে বহির্বিভাগেও বাড়ছে রোগীর চাপ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশ দূষণ, রাস্তার ধুলাবালিসহ বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তাতেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এছাড়া এ সময় পানি কম পান করা হয় বলে শরীরে পানিশূন্যতা থাকে। ফলে জীবাণু বের হতে পারে না এবং সহজেই বিস্তার লাভ করে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ড. দীনেশ চন্দ্রশীল বলেন, ‘শীতের প্রকোপে শ্বাসকষ্টজনিত এবং ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসক কম থাকায় বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিসৎকরা। তবুও বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।’

এএ/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!