লক্করঝক্কর গাড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত, পড়ুয়ারাই গিনিপিগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী পরিবহনে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় চালিত নববাকের বাসগুলোর অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন ও লক্কর ঝক্কর। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা এসব বাসের চুক্তি বাতিলের দাবি তুললেও কর্তৃপক্ষ কান দিচ্ছে না তাতে। ফলে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফটিকছড়ির থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে হাটহাজারী সরকার হাট চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় বিআরটিসির একটি বাস রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এ সময় ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। তার মধ্যে ১২জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জানা গেছে, প্রায় তিন যুগ ধরে নববাকের বাসগুলো চবির শিক্ষার্থী পরিবহন করছে। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে এ দুটো বাসে প্রতিদিন ২০০ থেকে আড়াইশোর মতো শিক্ষার্থী যাতায়াত করছে। অথচ ফিটনেসবিহীন বাস দুটোর ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৮৫ থেকে ৯০ জন। দৈনিক ১৩-১৪ হাজার টাকায় ভাড়া চুক্তিতে চালিত বিআরটিসির বাসগুলো ফিটনেস হারিয়ে অনেক আগে। তারপরও অকোজো, লক্কর ঝক্কর এসব বাস রঙ লাগিয়ে শিক্ষার্থী পরিবহন করছে। এ বিষয়ে বার বার শিক্ষার্থীরা চবি কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানোর পরও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ফাজিয়া আফরোজ নিপা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ফটিকছড়ির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করি। ৫০ সিটের এ বাসটির ফিটনেস নেই। কিন্তু শিক্ষার্থী নেয়া হয় তিন গুণ। এ অবস্থায় প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই এসব বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়। আজ সেই আশঙ্কাটাই সত্যি হল। দুর্ঘটনা যখন ঘটে ভেবেছিলাম আজ আর বেঁচে ফিরতে পারবো না। কিন্তু ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলাম।’

পলিটিক্যাল সাইন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আজ দুর্ঘটনায় বাসটি খাদে পড়ে গেলেও পানি কম থাকায় আমরা বেঁচে গেছি। যদি কোনও পুকুরে গিয়ে গাড়িটি পড়তো তাহলে হয়তো লাশ হয়ে যেতাম।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘বাসটির ধারণক্ষমতার তিনগুণ শিক্ষার্থী বাসে উঠানো হয়। তাছাড়া ড্রাইভার অনেক বেশি উচ্ছৃঙ্খল। তার গাড়ি চালানো দেখে মনে হয় যেন কোনও প্রতিযোগীতায় নেমেছে। একে তো ফিটনেসবিহীন ভাঙা গাড়ি, আবার ওভারটেকিংয়ের কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই গাড়িগুলোর চুক্তি বাতিলের জন্য আমরা অনেকবার আন্দোলন করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেয়নি।’

ফটিকছড়ি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক দিন ধরে হয়তো চাচ্ছিল এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটুক। কারণ সিরিয়াস কিছু না ঘটলে, কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। হয়তো এবার নড়তে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর এসএস মনিরুল হাসান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পেয়েছি তিন মাস হয়েছে। এ তিন মাসে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। আর এ বিষয়টি আমি জানতামও না। আজকে দুর্ঘটনার কথা শুনেছি এবং অনেক শিক্ষার্থী আজ আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি আমি দেখছি। খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হবে।’

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!