চট্টগ্রামজুড়ে অভয়ারণ্য কেটে সাফ, শোধ নিচ্ছে হাতির দল

হাতি যে পথে একবার আসে, সেই পথে শত বছর পর হলেও ফিরে আসে। হাতির স্মৃতিশক্তি এমনই প্রখর বলে জানিয়েছে প্রাণি গবেষকরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশে বন কেটে গড়ে উঠছে লোকালয়। এতে নিজেদের আবাসস্থল খুঁজে না পেয়ে প্রতিশোধ হিসেবে বন্যহাতি প্রায়ই মানুষের ওপর তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে মন্তব্য হাতি গবেষকদের।

জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসস্থল তৈরি করতে গিয়ে কক্সবাজারে হাতির অভয়ারণ্য এলাকার বন-জঙ্গল নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী দেয়াঙ পাহাড়ে আসছে হাতির পাল।

সম্প্রতি যে এলাকাগুলোতে হাতি আসছে, আগে কখনও এমন বিচরণ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। হঠাৎ হাতির মুখোমুখি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিনই পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল গ্রামবাসীর জমির ফসল, ঘর-বাড়ি ও গাছ-পালার ক্ষতি করছে। গত দেড় বছর ধরে তিনটি হাতি আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। হাতিগুলো কখনও দিনে আবার কখনও রাতে লোকালয়ে নেমে আসে। ওই এলাকা থেকে হাতি সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বনবিভাগও। এতে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

কোরিয়ান কেইপিজেডের কর্মকর্তা মঈনুল আহসান বলেন, ‘হাতি কেইপিজেডের বনায়নকৃত বড়-বড় ফলবান নারকেলসহ নানা গাছপালা ও কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি করেছে।’

স্থানীয় বারশত ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, হাতির তাণ্ডবে ক্ষোভে ফুঁসছে জনগণ। হাতিগুলো খাবারের খোঁজে ছুটে আসে দেয়াঙ পাহাড়ে। হাতি থেকে জনগণকে রক্ষায় বনবিভাগকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান তারা।

পটিয়া বন বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যহাতি জোর করে সরিয়ে নেওয়া যায় না। হাতিগুলোকে পাহারায় রাখতে হবে। হাতিরা স্বাভাবিকভাবে ফিরে যাবে। তবে যখন ফিরে যাবে, তখন যাতে আর না আসে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তবে হাতি থেকে নিজেদের রক্ষায় স্থানীয়দের সতর্ক ও সচেতন থাকতে আহ্বান জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতি গবেষক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘পূর্ণবয়স্ক একটি হাতি দিনে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি খাবার গ্রহণ করে। আমাদের পাহাড়গুলোতে এত খাবারের যোগান দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না সেটাও তো দেখতে হবে। হাতির আক্রমণে মৃত্যুর জন্য মানুষের অসচেতনতাই প্রধানত দায়ী। হাতি দেখলেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যায়। হাতির মুভমেন্ট যে স্বাভাবিক বিষয়, এটা মানুষ বুঝতে চায় না। হাতিকে বিভিন্নভাবে ডিস্টার্ব করে। একটি হাতি একবার হাঁটা শুরু করলে সে পথ দিয়ে বহুবার আসবে এটা তাদের অভ্যাস। বর্তমানে পথগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। তারা যাবে কোথায়? পাহাড় ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে তারা লোকালয়ে চলে আসে। হাতি পাহাড়ে খাবার পাচ্ছে না। এ সময়ে লোকালয়ে খাবার বেশি থাকে বলে ছুটে আসে তারা।’

এসবি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!