মুড়ির টিনই মিনিবাস, চট্টগ্রামে ৫ হাজার হিউম্যান হলারের রাজত্ব

চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন রুটে চলাচলরত হিউম্যান হলারগুলোর সিট বাড়িয়ে নিয়ে মিনিবাসে রুপান্তর করে নিয়েছে। চেসিস ও ইঞ্জিনের ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ সিট স্থাপনের কারণে সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহনের কারণে প্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, নগরে ৪ হাজার ৩১২টি হিউম্যান হলারের অনুমোদন রয়েছে। যানবাহনগুলোর ১১, ১২, ১৩, ১৭ সিটের অনুমোদন থাকলেও বডি বাড়িয়ে ২২, ২৪, ২৮ সিটের করা হয়েছে।

জানা যায়, নগরের কদমতলী, হাটহাজারীর বড়দিঘির পাড় এলাকায় হিউম্যান হলার বা মিনিবাসগুলো তৈরি হয়। সরেজমিনে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হাটহাজারী মুরাদপুর সড়কের বড় দিঘীর পাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুল সড়ক ও ভাটিয়ারি লিংক সড়কের দুপাশে গড়ে ওঠা গ্যারেজগুলোতে হিউম্যান হলারসহ নানা যানবাহনের বডি প্রস্তুতের কাজ চলছে। গ্যারেজের বডি মিস্ত্রি রবিউল বলেন, ‘মালিকের ইচ্ছেমাফিক সিট বসিয়ে যানবাহনের বডি প্রস্তুত করি। তবে ফিটনেস নেওয়ার সময় সিট খুলে রেখে সনদ নেওয়ার পর আবারো সিটগুলো স্থাপন করি।’

অভিযোগ আছে, বিআরটিএ কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ৩০-৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে হিউম্যান হলারগুলোর ফিটনেস সনদ নেওয়া হয়। ফিটনেস সনদে নেওয়ার সময় গাড়ি বিআরটিএ অফিসে আনার নিয়ম থাকলেও অবৈধ যানবাহন না এনে অথবা আনলেও অতিরিক্ত খুলে রেখে ফিটনেস সনদ নেওয়ার পর তা পরে স্থাপন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ এক কর্মকর্তা জানান, হিউম্যান হলারগুলোর সিট বাড়িয়ে মিনিবাসের রুপান্তর করার বিষয়ে ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় মালিকের কাছে স্ট্যাম্প নেওয়া হয় বাড়তি সিট খুলে নেওয়ার জন্য। তবে অঙ্গীকার থাকলেও কোন হিউম্যান হলারে অতিরিক্ত সিট খুলে নেওয়া হয় না। বর্তমানে হিউম্যান হলারে ফিটনেস বন্ধ রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিআরটিএ অনুমোদিত ৪ হাজার ৩১২টি মিনিবাস হলার থাকলেও নগরীতে প্রায় ৫ হাজারের বেশি হিউম্যান হলার বা মিনিবাস চলাচল করছে। স্থানীয় পদ্ধতিতে তৈরি মিনিবাসগুলোতে এমনভাবে সিট স্থাপন করা হয় মানুষ বসতে পারে না। দুটি সিটের মাঝখানে পর্যাপ্ত জায়গাও থাকে না। এসব যানবাহনে যাত্রীদের বসতে হয় কোন রকমে। গণপরিবহন সংকটের কারণে এসব ঝুকিঁপূর্ণ যানবাহনে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

রাসেল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মুড়ির টিন মার্কা এসব বাহনে বাধ্য হয়েই চড়ি। গণপরিবহন পাওয়াই যেখানে অসম্ভব সেখানে কোনমতে গন্তব্যে পৌঁছাটাই আসল ।’

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অতিরিক্ত আয়ের জন্য গাড়ি মালিকের ইচ্ছেমত যানবাহনের ইঞ্জিন ও চেসিসের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ সিট স্থাপনের ফলে যাত্রীদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।

৩ নম্বর রুটে চলাচলরত যাত্রী ব্যাংকার হাসান মাহমুদ বলেন, ‘মিনিবাসগুলোর সিট এত ছোট ছোট যে এখানে বসা অনেক কষ্টের । এছাড়া যানবাহনগুলোতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোও যায় না। এসব যানবাহন বন্ধ করে আধুনিক ও আরামদায়ক যানবাহন সড়কে নামানো উচিত।’

বিআরটিএ ফিটনেস শাখার মোটরযান পরিদর্শক পলাশ খীসা বলেন, ‘আমরা যে কোন গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় সবকিছু দেখেই দিই। বাড়তি সিট থাকলে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয় না। তাছাড়া আমার সময় তেমন হিউম্যান হলারের ফিটনেস দেওয়া হয়নি, যা আছে তা আগের।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিআরটিএর অনুমোদন ছাড়া নগরে হিউম্যান হলারগুলো সিট বাড়িয়ে মিনিবাস রুপান্তরিত হয়েছে। এতে সড়কে বেড়েছে দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত সিটের ঝুঁকিপূর্ণ হিউম্যান হলারগুলো জব্দ করা উচিত। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব যানবাহন কিভাবে চলে জানি না।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!