র‌্যাবের অব্যাহত অভিযানেও থামছেনা মানবপাচার! অবৈধভাবে ইরাকে পাচারকালে ৫ জন উদ্ধার : ৪ দালাল চিহ্নিত

রাজীব সেন প্রিন্স :

র‌্যাবসহ দেশের প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবপাচার রোধে  অব্যাহত অভিযানেও থামছেনা মানবপাচার। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন রুট ব্যবহার করে পাচার হচ্ছে দেশের সহজ সরল বেকার যুবক ও যুবতি। কোন কোন অভিযানে পাচার হওয়ার আগে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হলেও ধরা ছোয়ার আড়ালে থেকে যায় দালালচক্র।

10-11-16

ভুক্তভোগী কয়েকজনের কথামতো বোঝা যায়, আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখিয়ে একটি মানুষরুপি ঘৃণ্য পশুর চক্রে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে নিজের জীবনকে বিপন্ন করে দিচ্ছে দেশের সহজ সরল ও বেকার অভিশপ্ত যুব সমাজ। ঘৃণ্য এ চক্রটিকে শুদ্ধ বাংলায় দালাল নামেই আখ্যায়িত করা হয়। এসব দালালরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেকার যুবকদের টার্গেট করে নীরবে মানবপাচার চালিয়ে আসছে। তবে তাদের টার্গেট থাকে দেশে বেকার কিন্তু বিদেশ যাবার লোভে পড়ে অন্তত কিছু টাকা যোগাড় করতে পারে এমন ব্যাক্তি।

 

সূত্রে জানা যায়, তারা সহজ সরল যুবকদের অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের বাইরে পাঠালেও মূলত তাদের কোনও কাজে যুক্ত করা হয়না। তারা দিনের পর দিন তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে বিদেশে এসব যুবকদের জিম্মি করে দেশে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করাই হলো দালাল চক্রের প্রধান লক্ষ্য। মানবপাচারের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত কৌশল বদলাচ্ছে পাচারকারীরা। তারা বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে এক একজন বেকার যুবককে টার্গেট করে দেশের বাইরে পাচার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের দালালদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীদের ভালো যোগসূত্র থাকায় মানবপাচার চক্রগুলো থেমে নেই। মানবপাচারের শীর্ষ মাফিয়াগোষ্ঠী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নিয়মিত অভিযানের পরও নতুন নতুন দালাল বা পাচারকারী সৃষ্টি হচ্ছে।কখনও কখনও দালালসহ ধরা পড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জাল পাসপোর্ট। কিন্তু তাতে থেমে নেই আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র।

র‌্যাবের অভিযান : পাচারকালে উদ্ধার ৫

দেশব্যাপী মানবপাচার রোধকল্পে এবং দেশের যুব সমাজকে মানবপাচারের অভিশপ্ত ফাঁদ থেকে রক্ষার জন্য র‌্যাবের মানবপাচার বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দালালচক্রের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য র‌্যাব প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অব্যাহত অভিযানে বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে অবৈধভাবে কাতার হয়ে ইরাকে পাচারকালে ৫ জনকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৭। এসময় কোন দালালকে আটক করতে না পারলেও ভিকটিমদের দেয়া তথ্যমতে ৪ দালালকে চিহ্নিত করেছে র‌্যাব। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানায় র‌্যাব।

 

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক মিডিয়া (এএসপি) সোহেল মাহমুদ এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

 

পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করা ৫ জন হলো- মোঃ তুহিন ইসলাম (২৬), পিতাঃ রহমান মোল্লা, গ্রামঃ আনন্দপুর, থানাঃ সদর, জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ, সজিব আহমেদ (৩০), পিতাঃ সামছুদ্দিন আহমেদ, গ্রামঃ গোপালপুর বাজার, থানাঃ বারহাট্রা, জেলাঃ নেত্রকোনা, মোঃ রাসেল ঢালী (২৭), পিতাঃ তাফিজ ঢালী, গ্রামঃ আনন্দপুর, থানাঃ সদর, জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ, মোহাম্মদ সোহাগ (৩২), পিতাঃ তাফিজ তাতী, গ্রামঃ আনন্দপুর, থানাঃ সদর, জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ, ও মোঃ রিপন (২৩), পিতাঃ শহিদুল্লাহ বেপারী, গ্রামঃ আনন্দপুর, থানাঃ সদর, জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ।
র‌্যাব জানায়, গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হতে দুবাইগামী এয়ার এরাবিয়া দুটি ফ্লাইটে অবৈধভাবে লিবিয়াগামী ৩৯ জনকে পাচারকালে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বুধবার রাতে গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কাতারগামী এয়ার এরাবিয়া ফ্লাইট কতিপয় লোক অবৈধভাবে কাতার হয়ে ইরাক যাচ্ছে।

 

এ তথ্যের ভিক্তিতে র‌্যাব দল বিমান বন্দরে অভিযান চালিয়ে পাচারের চেষ্টাকালে ৫ জনকে উদ্ধার করলেও পাচারকারী চক্রের কাউকে আটক করতে পারেনি।

 

এসময় ৫ জনের ব্যাগ তল্লাশী করে পাসপোর্টসহ কাতারের ভিসা এবং তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ইরাকের ৫টি ভিসার কাগজ পাওয়া যায়।
উদ্ধারকারীরা র‌্যাবকে জানায়, তাদেরকে পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন এলাকা হতে দালালদের মাধ্যমে ইরাক নেয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার ফকিরাপুলস্থ ছায়ানীড় হোটেলে উঠানো হয়। পরবর্তীতে দালাল রবিউল (৩২), ঢাকা এসে এদেরকে ভিসা এবং পাসপোর্ট দিয়ে যায়। বিমানের টিকিট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, এদের যাতায়াতের রুট হল চট্টগ্রাম- শারজাহ-কাতার- ইরাক।

 

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক মিডিয়া (এএসপি) সোহেল মাহমুদ আরো জানান, মানব পাচারকারী চক্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা চুক্তির মাধ্যমে ইরাক পাঠানোর জন্য লোকজনদের প্রলুব্ধ করে। উদ্ধারকারীরা ইরাক পৌছানোর পরে টাকা পরিশোধ করবে বলে চুক্তি হয়। তারা কোন অগ্রিম টাকা দেয়নি। ইরাক পৌছানোর পরে কিছু কিছু লোক নিজ উদ্যোগে এবং কেউ কেউ দালালের মাধ্যমে ইউরোপের অন্য কোন দেশে যাবে বলে জানা যায়।

 

এদিকে উদ্ধারকৃতদের তথ্যের ভিক্তিতে র‌্যাব পাচারকারী চক্রের ৪ দালালকে চিহ্নিত করেছে। তারা হলো-মুন্সিগঞ্জের মোঃ সবুজ (৪৫), মোঃ সজিব আহমেদ (২৫), মোঃ রবিউল (৩২), মোঃ জসিম (৩২)। উদ্ধারকৃতদের পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর এবং দালাল চক্রকে গ্রেফতারের চেষ্টার চলছে বলে র‌্যাব জানায়।

 

রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

 

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!