মৃত্যু-আতংক ভর করলেও ঘুম ভাঙ্গছে না পাহড়ে বসবাসকারীদের

কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা জাদি পাহাড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন ৬৫ বছর বয়সী আবদু সালাম। ভারী বর্ষণের ফলে একাধিকবার পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটলেও এখনো কোনো জায়গা না পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনীদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে আসছেন তিনি।

শুধু আবদু সালাম নয় তার মতো হাজার হাজার মানুষ রয়েছে, যারা শহরের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। অথচ প্রতিবছরই পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে প্রাণ যাচ্ছে অনেক নিরহ মানুষের। পাশাপাশি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ হানিও। সর্বশেষ গত বছর শহরের লাইট হাউজ, ঘোনারপাড়া, কলাতলীসহ একাধিক স্থানে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় মারা যায় কয়েকজন। বছরের পর বছর পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়লেও বোধদয় হচ্ছে না ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের। জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, পৌর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে রাজি হয় না বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা। প্রতিবছর বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা। প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড় ধ্বসের আতংক ও মৃত্যু পাহাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে ভর করলেও তারা রয়েছে অনড়।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সরেজমিনে শহরের ঘোনারপাড়া, বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, ইসলামপুর, জাদিপাহাড়, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশা ঘোনা, মোহাজের পাড়া, লাইট হাউসসহ বিভিন্নস্থানে গিয়ে দেখা গেছে এর বাস্তব চিত্র। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমের ভারী বৃষ্টিতে ফের প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে শতভাগ।
ভারী বৃষ্টিতে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বছরের পর বছর বসবাস করে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ বছর তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে শীঘ্রই উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
মৃত্যু-আতংক ভর করলেও ঘুম ভাঙ্গছে না পাহড়ে বসবাসকারীদের 1

সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তার বলেন, ‘সবসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বর্ষা মৌসুমেও পাহাড়ি এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে থাকে বনবিভাগ। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি না হওয়ায় তারা সরে আসে না।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদি বৃষ্টি বৃদ্ধি পায় তাহলে পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!