মারধরের অভিযোগে আলকরণ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা

সম্পত্তির বাটোয়ারা নিয়ে শালিসি বৈঠক ও তার জেরে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আলকরণ দুই নম্বর গলির মরহুম আব্দুল মান্নানের মেয়ে মমি আক্তারের স্বামী মো. জাহেদ এ মামলা করেন।

মমি আকতারের পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে শালিসি বৈঠকের জেরে এ ঘটনা ঘটে। মামলায় অন্য অভিযুক্ত হলেন মমি আক্তারের চাচা আবদুল সোবহান।

বাদিপক্ষের আইনজীবী মো. আবু আবদুল্লাহ আল হেলাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মারধরের ঘটনায় সদরঘাট থানায় মামলা গ্রহণ না করায় বাদিপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত সদরঘাট থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিমের সাথে বাদি জাহেদের চাচা শ্বশুর আব্দুল সোবহানকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদি জাহেদের শ্বশুর আব্দুল মান্নান মারা যাওয়ার পর নানার বাড়িতে বেড়ে উঠেন তার স্ত্রী মমি আক্তার। নানার বাড়ির সহায়তায় অনেক কষ্টে মমিকে পাত্রস্থ করেন তার মা। মমির পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ-দখল করে রেখেছেন চাচা আব্দুল সোবহান। এসব সম্পত্তি উদ্ধারে মাসছয়েক আগে কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিমের দ্বারস্থ হন মমি ও তার স্বামী মো. জাহেদ। বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য উভয়পক্ষকে বেশ কয়েকবার ডাকেন সেলিম। কিন্তু বিবাদি পক্ষ উপস্থিত থাকতেন না। সর্বশেষ ২১ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১ টায় কাউন্সিলর সেলিমের বাসায় বৈঠক হয়। বৈঠকে কোন সম্পত্তি না দিয়ে এক লাখ টাকায় দেওয়ার পাশাপাশি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে চায় আব্দুল সোবহান। মমি ও জাহেদ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে কাউন্সিলর সেলিম ও বিবাদি আব্দুল সোবহান তাদের অপদস্থ করেন।

একপর্যায়ে সেলিম ও সোবহান জাহেদকে মারধর, কিল-ঘুষি, লাথি মারতে শুরু করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে লোহার স্কেল দিয়ে জাহেদের গলা পেঁচিয়ে ধরেন সেলিম। মমি চিৎকার দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে কাউন্সিলর ও সোবহান মারধর-শ্লীলতাহানি করে তাকে টেনে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামিয়ে দেন। ঘটনার পর মমি আক্তার ও তার স্বামী জাহেদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমন অভিযোগে থানায় কেউ মামলা নিয়ে আসেননি। থানা তো সবার জন্য উন্মুক্ত।’

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম বলেন, ‘মমি আক্তার ও তার স্বামী সম্পত্তি সংক্রান্ত শালিস চেয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে কোন ডকুমেন্ট নাই। পরে পরে জানলাম তাদের দাদার সম্পত্তি ভাগ হয়নি। আরো একটা ঝামেলা হলো তার মৃত পিতার সাথে মায়ের তালাক হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে বিষয়টি আমি সমাধান করতে পারবো না বলে দিয়েছিলাম। তখন তারা সবাই মিলে আমার বাসায় হট্টগোল শুরু করে। তখন দুই পক্ষকেই আমি বাসা থেকে চলে যেতে বলেছিলাম। ঘটনা এতটুকুই। মারধর কিংবা শ্লীলতাহানির কোন বিষয় এখানে নেই।’

এদিকে, নিজেকে শ্লীলতাহানির শিকার দাবি করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অফিসে উপস্থিত হয়ে মমি আক্তার বলেন, ‘২১ আগস্ট আমার স্বামীসহ কাউন্সিলরের বাসায় যাওয়ার পর আগ থেকে তাদের পরিকল্পনা অনুসারে আমাকে ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলে। তখন আমার স্বামী জাহেদ আমাকে স্বাক্ষর করতে নিষেধ করলে কাউন্সিলর চেয়ার থেকে উঠে এসে তাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে আমাদের মেরে ওখান থেকে বের করে দেয়। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমার স্বামী নিচে নামলে কাউন্সিলর তার অনুসারী ১০-১২ জন যুবককে তার পিছনের লেলিয়ে দিয়ে বলেন, তারে ফেলাই জবাই গরি দে। তখন আত্মরক্ষার্থে আমার স্বামী গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আমরা সদরঘাট থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে কাউন্সিলরের নাম শুনে থানার ওসি এসএম ফজলুর রহমান ফারুকী মামলা গ্রহণ করেন নি। তারপর আমার স্বামীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দিই। ২৭ আগস্ট আদালতে মামলা দায়ের করি।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!