মামলাবাজি করে মেয়র রেজাউল চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার ছক আঁকছেন

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের গণমিছিলে অভিযোগ

মামলা-হামলার নির্দেশনা দিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার ছক আঁকছেন বলে অভিযোগ করেছেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর কদমতলী মোড়ে আয়োজিত গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে এ অভিযোগ করেন নেতৃবৃন্দ। আগামী ২১ অক্টোবর গণশুনানির কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ থেকে স্থাপনার ভাড়ার ওপর নির্ধারণ করা গৃহকর আইন ১৯৮৬ বাতিলের দাবি জানানো হয়।

চট্টগ্রামের করদাতা সুরক্ষা পরিষদ স্থাপনার ভাড়ার বদলে স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এর মধ্যে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর’ বক্তব্যের অভিযোগে২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা ও দুটি জিডি করা হয়েছে। এরপর নুরুল আবছারকে গ্রেপ্তার করতে অভিযানও চালায় পুলিশ।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়িতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, ‘আমরা শহরে বাস করি মোট ১১ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে…আমরা আপনার (মেয়র) বাড়িতে থাকি না। যদি আপনি (মেয়র) বাজে কথা বলেন, আমরা আপনাকে শহর থেকে তাড়িয়ে দেব… আপনাকে শহর ছেড়ে যেতে হবে।’

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ভাড়ার ওপর নির্ধারণ করা গৃহকর চট্টগ্রামবাসীর গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আপিলের পরও সহনীয় হচ্ছে না। আপিলের পরও চার-পাঁচ গুণ বর্ধিত থেকে যায়। ভাড়ার ওপর কর নির্ধারণের এমন আজব নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। এমনকি বাংলাদেশের কোনো করপোরেশন বা পৌরসভায়ও নেই। তাহলে চট্টগ্রামবাসীর কী অপরাধ? তাদের ওপর কেন বারবার এমন শাস্তি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়?’

মেয়র রেজাউলের ইন্ধনে মামলা দায়েরের প্রসঙ্গ টেনে সমাবেশে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিন বলেন, ‘সভাপতির বক্তব্যের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। মেয়র যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সেখানেও দুঃখ প্রকাশ করব। কিন্তু চট্টগ্রামের স্বার্থে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। সুরক্ষা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটি সামাজিক সংগঠন, যা চট্টগ্রামের মানুষের দুঃসময়ের বন্ধু।’

তিনি বলেন, ‘মেয়র মহোদয় দৃশ্যপট থেকে সরে গিয়ে মামলা দিয়েছেন। একটা হাস্যকর বিষয় নিয়ে এ মামলা। আমাদের সভাপতি নুরুল আবসার চট্টগ্রামের ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। এটাই চট্টগ্রামের ভাষার টোন। এভাবেই চট্টগ্রামের মানুষ কথা বলে। আমরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। যারা সিটি করপোরেশনের টেন্ডার লুটেপুটে খেতে চায় তারাই এখন ষড়যন্ত্র করছে। তারা মেয়রকে তোষামোদ করে এ পথে এনেছেন। মেয়র পদে যে থাকেন তারা সেখানে জুটে যায়।’

মুহম্মদ আমির উদ্দিন বলেন, ‘মেয়রের পক্ষে যারা সংক্ষুব্ধ হয়ে সভা-মিছিল করছেন তাদের মধ্যে আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব আছেন, যারা সত্যিকার অর্থে নিবেদিত রাজনীতিবিদ, ভালো মানুষ। কিন্তু তাদের সঙ্গে মিশে আছে পদ-পদবি আর করপোরেশনের দুর্নীতির হালুয়া-রুটির ভাগ নেওয়ার প্রত্যাশায় অতি উৎসাহী ধান্ধাবাজ চক্র। যারা এসব করে মেয়র তথা সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে, জনবিচ্ছিন্ন করছে।’

তিনি বলেন, ‘মেয়র সাহেব যদি জনগণের পালস বুঝতে না পারেন, তাহলে উনাকেও চলে যেতে হবে। আপনারা ১৭% কেন ৫০% হোল্ডিং ট্যাক্স নেন। তবে ভাড়ার ভিত্তিতে ট্যাক্স হবে না। এখন তিনি নরম সুরে কথা বলছেন। কিন্তু আপিলের নামে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার কী হবে? চট্টগ্রামের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। সিটি করপোরেশন, ওয়ার্ড কার্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একটা সনদ নিতে গেলে ঘুষ দিতে হয়। চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রামবিদ্বেষী হবেন না। সাবধান হয়ে যান। আমরা কোনো সংঘর্ষে জড়াতে চাই না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আগেও করেছি, ভবিষ্যতেও করব।’

পরিষদের নেতা হাসান মারুফ রুমী বলেন, ‘গণআন্দোলন করতে গেলে এমন আঘাত আসবে সেটা স্বাভাবিক। আমরা মামলা-হামলায় ভীত নই। আমাদের সঙ্গে চাটগাঁবাসী আছেন। অতীতেও আমাদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে, চাকরিচ্যুত করেও বিরত করা যায়নি। এবারও যাবে না। বৃহস্পতিবার তার রহমানবাগের ভাড়া বাসায় হামলা চালানো হয়েছে। সুরক্ষা পরিষদের মতো অতিশয় ক্ষুদ্র সংগঠনের সভাপতির বিরুদ্ধে জনগণের করের লাখ লাখ টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ করুন।’

সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার সমাবেশে অনুপস্থিত থাকলেও তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সমাবেশে বলেন, ‘আমার স্বামী ৬০ লাখ মানুষের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে মামলার শিকার হয়েছেন। তিনি কোনো অপরাধ করেননি। আমি আমার স্বামীকে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম। যতক্ষণ পর্যন্ত এই গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চালানোর জন্য পরিষদের নেতাদের কাছে অনুরোধ করছি।’

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের উপদেষ্টা মুজিবুল হক বলেন, ‘আমরা ন্যায়ের পথে যুদ্ধে নেমেছি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আজকের আন্দোলনের পথে নেমেছে। এখানে যদি এভাবে কর নিতে পারে সারা দেশে সব সিটি করপোরেশনে এভাবে কর চাপিয়ে দেবে।’

মেয়র রেজাউলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি শুধু মেয়র নন, অভিভাবকও বটে। নিজ গুণে নুরুল আবসার ভাইয়ের মামলা তুলে নিন। আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাল্লাহ।’

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুরক্ষা পরিষদের নেতা সাবেক কাউন্সিলর এমএ মালেক, সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, সৈয়দ হোসেন, শ্রমিক নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম, মফিজুর রহমান, হারুনুর রশীদ, ইসমাইল হোসেন মনু, আরশাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট এআর জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট বিশুময় দেব, নজরুল ইসলাম সর্দার, মীর মো. ইসলাম, মীর আক্তার হোসেন, মাসুদ খান মুন্না, আবদুর রহিম, জাহেদ আলী, আরমান আলী, হাবিবুল্লা, মোজাম্মেল হোসেন জ্যাকি ও মুন্না খান। সভা সঞ্চালনা করেন সাজ্জাদ হোসেন জাফর ও সোহেল আহমেদ।

মেয়র সমর্থকদের মানববন্ধন
এদিকে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সমর্থক ও ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও ওমর গণি এমইএস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!