মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ‘রাজাকারপুত্র’ বানাতে অভিনব জালিয়াতি, তবু নালিশ নেয়নি কেন্দ্রীয় দপ্তর সেল

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি’ থামছেই না। এবারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে খোদ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে চিঠি জমা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগও উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে। শেষ মুহূর্তে সেই জালিয়াতির খবর জানতে পেরে বিষয়টি জানিয়ে মনোনয়ন বোর্ডে চিঠি দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এমন এক সময়ে এরকম অভিযোগ উঠল, যখন খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন না পেলেই একে-অপরকে রাজাকার বা রাজাকারপুত্র বানাতে ব্যস্ত সবাই। তারপরও কিছু সত্য ঘটনা রয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জানা গেছে, চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ইউনিয়নের কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেওয়া হয়েছে। দপ্তর সেলে গৃহীত হওয়া সেই চিঠি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্যাডে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে আসন্ন নির্বাচনে কলাউজান ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ এয়াসিনকে ‘রাজাকারপুত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে এই চিঠির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন কলাউজান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী ইসহাক ও সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম।

এমনকি এই ‘ভুয়া অভিযোগের’ বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি চিঠি কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী ইসহাক। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই চিঠি প্রচার করে প্রতিবাদ জারি রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী ইসহাক বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর জাল করে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে মোহাম্মদ এয়াসিনের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কে বা কারা এই অভিযোগ দিয়েছে আমি জানি না। আমি এর মধ্যেই এর প্রতিবাদ করে একটা চিঠি কেন্দ্রে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অফিস সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সেই চিঠি জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আমি ও আমার কর্মীরা ফেসবুকে প্রতিবাদের চিঠিটা প্রচার করছি।’

কেন্দ্রে দপ্তর সেলে জমা দিতে না পারা সেই চিঠিতে মনোনয়ন বোর্ডের সেই চিঠিতে গাজী ইসহাক লিখেছেন, ‘কে বা কারা আমার সিল ও স্বাক্ষর জাল করে মো. এয়াসিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। এই সিল বা স্বাক্ষর আমার নহে।’

গাজী ইসহাক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক ঢাকাতেই আসেননি। আমি ঢাকাতে আছি। যখনই এয়াসিনের বিরুদ্ধে আমাদের সিল সাইন সহ অভিযোগ দেওয়ার কথা শুনেছি, তখনই আমি এর প্রতিবাদ করে সত্য তুলে ধরে পাল্টা আরেকটি চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে পাঠিয়েছি। কিন্তু দপ্তর সেল থেকে বলা হয়েছে লোহাগাড়া উপজেলার ফাইল দপ্তর সেল থেকে মনোনয়ন বোর্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম বলেন, ‘আমি লোহাগাড়াতে আছি। ঢাকাতেও যাইনি। আমার স্বাক্ষর নকল করে কে বা কারা অভিযোগ জমা দিয়েছে এটা জানি না। যেখানে আমি ঢাকাতেই যাইনি সেখানে এই ধরনের অভিযোগ জমা দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। এসব অভিযোগ সত্য নয়।’

গত ২০ নভেম্বর দপ্তর সেলে গৃহীত হওয়া সেই চিঠিতে মো. এয়াসিনকে ‘রাজাকার’ ও ‘জামায়াত-শিবির নেতার পুত্র’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

মো. এয়াসিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বাবা বেঁচে নেই। তিনি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহকর্মী ছিলেন। উনার প্রতিটা নির্বাচনে আব্বা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের নন্দনকাননের বাসায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে আমাদের এই বাসা থেকে। আজ উনাকে রাজাকার-জামায়াত বলে কেন্দ্রে মিথ্যা অভিযোগ করা হল।’

এই ঘটনার তদন্ত করে সঠিক ঘটনা সামনে আনার দাবি করে তিনি বলেন, ‘সেই চিঠিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর দেখে আমি সাথে সাথে তাদের কল করেছি। তারা বলেছে তারা এই বিষয়ে কিছু জানেনা। প্রকৃত সত্য তারাই জানবে। তবে আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করি। শুধু আমার জন্যই না। রাজনীতি করি বলে আমাদের পরিবার পরিজনের সম্মানের নিশ্চয়তা থাকবে না এটা তো কাম্য নয়।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!