বেশি বয়সে কর্ণফুলী গ্যাসে ঢুকে নিয়েছেন পদোন্নতি, সরকারি চাকরি করেও নেতা আওয়ামী লীগের

চট্টগ্রামভিত্তিক কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ। সাড়ে ১১ বছর আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অস্থায়ীভাবে উপসহকারী প্রকৌশলীতে যোগদান করেন তিনি। অথচ নির্ধারিত মানের তুলনায় সার্টিফিকেটে তখনই বয়স বেশি ছিল তার। সেখানে যাচাই-বাছাই না করে ২০১৩ সালে হয়েছে তার চাকরি স্থায়ী করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান চলমান থাকা অবস্থায় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মধ্যরাতে কেজিডিসিএলের যে ৩৭ জন কর্মকর্তাকে নজিরবিহীন ‘পদোন্নতি’ দেওয়া হয়, নেই তালিকায় রয়েছে সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহর নামও।

অভিযোগ রয়েছে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) কর্মরত থাকা অবস্থায় সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ দায়িত্ব পালন করছেন পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদেও।

২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ তার নাম এদিক-ওদিক করে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ভাগিয়ে নেন সৈয়দ মোরশেদুল আলম নামে।

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর বলা আছে, সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না এই বিধিতে বলা হয়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ জুন এডহক ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়মিতকরণ করে কেজিডিসিএল। ২০১০ সালের ১০ জুন সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিবিহীন এডহক (সম্পূর্ণ অস্থায়ী হিসেবে) উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ। চাকরিতে যোগকালীন তার সার্টিফিকেট বয়স ছিল ৩০ বছর ৯ দিন।

দুদক সূত্র আরও জানায়, সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ চাকরি নিয়েছেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। সেখানে তার সার্টিফিকেটের বয়স ৯ দিন বেশি থাকার পরও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাকরি নেন তিনি। সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পূর্ববাড়ৈকারা বড়লিয়া ইউনিয়নের সৈয়দ শরিফ উল্লাহর পুত্র।

২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া দুদকের তদন্ত আংশিক তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে দুদক ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট না নিয়ে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট মধ্যরাতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সহকারী ব্যবস্থাপক ও সহকারী প্রকৌশলী পদের ৩৭ জন কর্মকর্তাকে। দুদক কর্মকর্তা জানান১০, পদোন্নতি পাওয়া এসব কর্মকর্তারা কেউ নিয়োগ পরীক্ষায় পাশই করতে পারেননি। তার মধ্যে অনেকের ছিল না শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটও। তবু ১০ বছর আগে ৩৭ জন লোক ‘নিয়োগ’ পেয়েছিলেন সহকারী এসব কর্মকর্তারা। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে এমনকি তাদের কোনো নথিপত্রও সংরক্ষণ করেনি কেজিডিসিএল।

এদিকে গত ৩০ জানুয়ারি সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ নিজেকে ‘এলজিইডি কর্মকর্তা’ দাবি করে দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যূত করার পাশাপাশি মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন নিজেই। শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ওইদিন সন্ধ্যায় আমার বাসায় সামনে এসেই আমাকে হুমকি দেয়, আমি নাকি তার (সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ) চাকরি জীবন ধ্বংস করে দিয়েছি। অথচ আমি তাকে চিনিও না। তাকে বললাম আপনাকে তো আমি চিনি না। কেন এসব কথা বলছেন?’ পরে দুদক কর্মকর্তার পাল্টা জবাবে দুদক কর্মকর্তা শরীফকে দেখে নেওয়ার হুমকি স্থান ত্যাগ করেন। ওইদিনের হুমকির ঘটনায় তাৎক্ষণিক চট্টগ্রামের খুলশী থানায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ বলেন, ‘২০১৪ সালের উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি এখন প্রায় বিলুপ্ত। নতুন করে কমিটি নেই। ওখানে আমার নাম নেই।’

আপনি ২০১৪ ও ২০১৫ সাল থেকে এখনও দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি না। কেউ হয়ত মিথ্যা বলছে আপনাকে।’

জালিয়াতি করে কেজিডিসিএলে চাকরি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ বলেন, ‘নতুন কোম্পানি হয়েছে। ওই সময় চাকরি নিয়েছি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের আমার সবকিছু যাচাই-বাছাই করে পদোন্নতিও পেয়েছি। সেখান থেকে তো কোনো অভিযোগ নেই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!