পেকুয়ার পাহাড়ে দুই ভাইয়ের রাম-রাজত্ব !

পেকুয়ার পাহাড়ে দুই ভাইয়ের রাম-রাজত্ব ! 1নিজস্ব প্রতিবেদক : পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকা নিয়ে অপরাধের ত্রাসের এক রাজত্ব কায়েম করেছে বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকার জাফর আলমের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম ও তারই অপর ভাই মো. আলমগীর। বনরাজা খ্যাত জাহাঙ্গীর ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী আলমগীরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ওই জনপদের প্রায় পাঁচ সহ¯্রাধিক মানুষ। এমন কোন অপরাধ নেই যা ওই দুইভাই পাহাড়ী জনপদে সংগঠিত করছেন না।

ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বনভূমির মূল্যবান গাছ কেটে পাচার, পাহাড় কেটে মাটি পাচার, বালি দস্যুতা, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজি, ধর্ষণ, হত্যার হুমকিসহ বহু অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। পেকুয়া থানা মামলাও রয়েছে একাধিক।

সরেজমিন মঙ্গলবার (১৮এপ্রিল) টইটং ইউনিয়নের পাহাড়ী জনপদের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ওই দুই ভাইয়ের নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা। তাদের হাতে কতটা জিম্মি সাধারণ মানুষ।

ভূক্তভোগী এক পরিবারে বায়োবৃদ্ধ ব্যক্তি জানান, আলমগীরের নির্যাতনের কারণে এলাকার মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠার আগেই অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে হয়। নয়তো শিকার হতে হয় আলমগীরের কু-লালসার। তার এক মেয়েকেও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল ওই আলমগগীর। পরে মেয়েকে চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় পাঠাতে বাধ্য হন এ পিতা। পরে সেখান থেকে মেয়েকে এলাকায় এনে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই রাখেন ওই পরিবার। কিন্তু এতেও নিস্তার মেলেনি। বর্তমানেও নিয়মিত উত্যক্ত করে চলেছে ওই মেয়েকে। পরিবারের সদস্যের অগোচরে তাদের ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায় ওই যুবক। এর বিচার চেয়ে জনপ্রতিনিধিদের ধারে ধারে ঘুরে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তাদের অস্ত্রের ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। নিতে পারেননি আইনী সহায়তা।

আক্ষেপের সাথে ওই বায়োবৃদ্ধ ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজিয়েছেন বেশ কয়েকবার। পরিশেষে নির্বিকার হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চেয়ে টেনেছেন আলাপের ইতি।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরো বলেন, ওই দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে পাহাড়ী জনপদে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে টইটংয়ের সোনাইছড়ি রমিজপাড়া, এবাদাতখানা, জুগিরছড়া, ধনিয়াকাটার পূর্বপাড়া, নতুনঘোনা, বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালীসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষের দখলীয় ভূমি বা বসতঘরের মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া, পাহাড়ী ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করে চললেও বনবিভাগ থাকে নির্বিকার। তাই সরকারী ওই দপ্তরের দিকে অপরাধীদের সাথে আতাঁতের অভিযোগের আঙ্গুল স্থানীয়দের। এছাড়াও পাহাড়ি জনপদে মাদক ব্যবসা, নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

বনরাজা খ্যাত জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বেড়ে গেছে তার দাপট। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরো বেশি পাহাড়ি এলাকা। তাদের পালিত অস্ত্রধারী ক্যাডারদের হাতে নির্যাতিত হয়ে সাধারণ মানুষ বিচার চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হবার অভিযোগও রয়েছে ওই ইউপি সদস্য ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও টইটংয়ের রমিজ পাড়া এলাকার সাকের, আহমদ ছফা, গিয়াস উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন জানান, বৈধভাবে বালি উত্তোলনের জন্য একটি মেশিন বসালেও বনরাজা জাহাঙ্গীর ৫০হাজার টাকা চাঁদাদাবী, মারধর ও হুমকির কারণে বালি উত্তোলন করতে পারছেন না তারা। অথচ তার একটু ধুরে জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আলমগীর পৃথক দুটি মেশিন বসালে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে।

এব্যাপারে জানতে বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ বনরাজা জাহাঙ্গীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এসব কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন।

টইটং ইউনিয়ন পরিষদেরে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। ওইসব এলাকায় কিশোরী মেয়ে রাখতে পারছেন না অভিভাবকরা। পাহাড়ের মধ্যে তারা দুইভাই ও তাদের পিতা জাফর মিলে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অন্যের জমি কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভোক্তভূগিদের জিম্মি করে রাখায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসছেনা। তারপরেও এব্যাপারে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পেকুয়া থানার অফিার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি অতিদ্রুত খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, অপরাধ কর্মকান্ডে ইউপি সদস্যের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!