পাহাড়তলী ঝুঁকি ছড়াল আশপাশেও, প্রশাসনের ভাবনায় শুধুই সাগরিকা

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ এপ্রিল। এদিন এখানে শাপলা আবাসিক এলাকায় এক নারী ও সাগরিকা এলাকায় একজন গার্মেন্ট কর্মকর্তা করোনা পজেটিভ শনাক্ত হন। মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে এই থানা এলাকায় করোনা পজেটিভ রোগীর সংখ্যা এখন আট।

এর মধ্যে এক পরিবারেই রয়েছে ৫ জন। বাকি ৩ জনের মধ্যে প্রথম দিন করোনা আক্রান্ত গার্মেন্ট কর্মকর্তা যে বাসায় থাকতেন ওই বাসার মালিক ১২ এপ্রিল ফৌজদারহাটে করোনা পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। তার গ্রামের বাড়িও সেখানে, স্ত্রীকে নিয়ে ওইদিনই ফৌজদারহাট গিয়েছিলেন তিনি। তিনি তার শহরের নিজ বাড়ি সংলগ্ন আব্দুল মালেক জামে মসজিদে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। ৮ এপ্রিল তিনি তার ভাইকে নিয়ে যান পাহাড়তলী বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনে আনেন। সেসব আবার তার শহরের বাড়ির আশেপাশের ১০০ পরিবারের মাঝে বিলিয়েও দেন তিনি। কিছু খাবার পাঠান গ্রামের বাড়িতে।

তার আগের দিন ১১ এপ্রিল ৫০ বছর বয়সী সিডিএ এলাকার যে ব্যক্তি করোনা শনাক্ত হন তার বাসা পাহাড়তলী থানার সামনে। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) তার স্ত্রী, কন্যা ও দুই ছেলের মধ্যে পাওয়া গেল করোনা ভাইরাস। এদের মধ্যে তার ছেলেটি দুদিন আগেও গিয়েছেন পাহাড়তলী থানায়।

অন্যদিকে ১০ এপ্রিল আকবর শাহ থানার ইস্পাহানি গোলচত্ত্বর এলাকায় শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি পাহাড়তলী থানা এলাকায় জোলারহাটের একজন সবজি বিক্রেতা। আর ১৩ এপ্রিল উত্তর কাট্টলীতে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিটিও ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা। পাহাড়তলী কাঁচা বাজার থেকে সবজি কিনতেন— তিনি এমনটাই স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

সব মিলিয়ে পাহাড়তলী এলাকা এর মধ্যেই করোনার ‘হটস্পট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে প্রশাসনের সব মহলে। এই এলাকাকে ঘিরে সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে এখানে আর কোন সন্দেহ নেই— এমন কথা বলছেন খোদ চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।

নানা কারণে পাহাড়তলী থানা এলাকাটি আলাদা গুরুত্ব রাখে চট্টগ্রামে। এখানকার পাহাড়তলী কাঁচাবাজারটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার আর পাইকারি বাজারগুলোর একটি। পাশাপাশি এই থানা এলাকায় অনেকগুলো গার্মেন্ট ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাগরিকার পাশে অলংকার মোড় চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যস্ততম মোড়গুলোর একটি। এর পাশের একে খান মোড় থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার বাস আসা যাওয়া করতো গণপরিবহন বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

সুতরাং পাহাড়তলী থানা এলাকার এই সামাজিক সংক্রমণ এখন আর শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ আছে কিনা নাকি আশেপাশের এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে— এটিও এখন দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। শুধুই কি পাহাড়তলী, নাকি সাগরিকা, অলংকার, একে খান, কর্নেলহাট আর ফৌজদারহাট পর্যন্ত এই পুরো অংশটি এর মধ্যে সামাজিক সংক্রমণের শিকার হয়ে গেছে এই বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলকে।

তবে এই যখন অবস্থা, তখনও পুরো এলাকা নয় বরং শুধুমাত্র সাগরিকা এলাকা লকডাউন করা কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।

এই বিষয়েও চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সাগরিকা থেকে আশেপাশের এলাকাগুলোতেও করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে।’

তবে কি পাহাড়তলী ও আশেপাশের এলাকাগুলো লকডাউন করা হচ্ছে— এই প্রশ্নের জবাবে ডা. হাসান শাহরিয়ার বলেন ‘আমরা আপাতত পাহাড়তলীর সাগরিকা এলাকাটা নিয়ে ভাবছি। এটা লকডাউন করা হতে পারে। বাকিটা আরও দেখি।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘আমরা তো লোকালি লকডাউন করছিই। পাহাড়তলী বাজারও বন্ধ করে দিয়েছি। পুরো এলাকা লকডাউন করার সাথে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। এগুলো মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!