পরিবেশে দূষণ ছড়িয়ে সিমেন্ট বানায় চট্টগ্রামের ন্যাশনাল সিমেন্ট

জরিমানা দিয়েও বারবার পরিবেশে দূষণ ছড়িয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস গত সেপ্টেম্বরে তিন লাখ টাকা জরিমানা দেওয়ার পরও মাত্র দুই মাসের মাথায় আবার জরিমানা গুণল ন্যাশনাল সিমেন্ট। অপরাধ সেই একই— পরিবেশ দূষণ।

পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তভঙ্গ করে মানমাত্রা বহির্ভূত অপরিশোধিত বায়ু ছেড়ে পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছিল কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর এলাকার ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। সিমেন্ট উৎপাদন করে বায়ু দূষণের দায়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। দুই মাস না যেতেই ফের বায়ু দূষণের দায়ে জরিমানার মুখে পড়ে ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। তবে এবারের জরিমানাটা ভিন্ন এবং জরিমানা পরিমাণও কম। এবারের জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, শেষবার জরিমানার মুখে পড়ে ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের বায়বীয় বর্জ্যে (এসপিএম – সাসপেনডেড পার্টিকুলার ম্য‌াটার) এর মানমাত্রা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। তবে তাও আদর্শ মানমাত্রা বহির্ভূত তাই জরিমানার পরিমাণও কম।

জানা যায়, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিমিটেড কর্তৃপক্ষের পরিবেশগত ছাড়পত্রের মেয়াদ ১৭ জুলাই শেষ হলে ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়াই কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম ৪ সেপ্টেম্বর কারখানা পরিদর্শন করে। কারখানার সৃষ্ট বায়বীয় বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে সেখানে বায়বীয় বর্জ্যে (এসপিএম) এর মান ৩১২ ও ২২৭ পায়— যা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী আদর্শ মানমাত্রা বহির্ভূত।

এর প্রেক্ষিতে ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে শুনানির জন্য ডাকে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তভঙ্গ করে বায়বীয় বর্জ্যের মানমাত্রা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এ বর্ণিত নির্ধারিত মানমাত্রার বাইরে থাকা পরও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে পরিবেশ দূষণ করে যাওয়ার কারণে
শুনানি শেষে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে তখন অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়। সেই সাথে প্রতি তিন মাস পর বায়ুর গুণগত মান বিশ্লেষণ ফলাফল জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

জরিমানার পর ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব ভার্টিক্যাল রোলার মিল (আরভিএম) স্থাপন করে বায়বীয় বর্জ্য পূর্বের তুলনায় বহুলাংশে কমে যাওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে এবং পরিবেশত ছাড়পত্রের মেয়াদ আগামী বছরের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সময় নেয়।

জানা গেছে, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিমিটেড কর্তৃপক্ষের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ৪৩৫ মেট্রিক টন। ধোঁয়া, ধুলো, বাষ্প এবং একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন পদার্থের কণার সমন্বয়ে তৈরি এসপিএম। ন্যাশনাল সিমেন্ট কর্তৃপক্ষের উৎপাদিত সিমেন্ট থেকে নির্গত অপরিশোধিত বায়ুর সাসপেনডেড পার্টিকুলার ম্য‌াটার (এসপিএম) মাত্রা সাধারণ মান মাত্রার অনেক বেশি। যা বায়ু দূষণের অন্য‌তম প্রধান কারণ। তাছাড়া বাতাসে এসপিএম বেশি থাকলে দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে খুব অসুবিধা হয়। এছাড়াও এই ধরনের পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে শরীরের এই অন্য‌তম প্রধান অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে সমস্য‌ারও সৃষ্টি করে থাকে।

জরিমানা পরিশোধ করলেও চলতি বছরের ১১ নভেম্বর আবারও প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরবর্তীতে কারখানার সৃষ্ট বায়বীয় বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ পূর্বক বিশ্লেষণ করা দেখা যায় সেখানেও বায়বীয় বর্জ্যের (এসপিএম) এর মান ৪৩৬,৫৩৪,৭৫৬,৫৩৭ যা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী আদর্শ মানমাত্রা বহির্ভূত।

পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তভঙ্গ করে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কেন ছাড়পত্র বাতিল করা হবে না— সে মর্মে ফের ৪ ডিসেম্বর কাগজপত্র নিয়ে জবাব দেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে ডাকা হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে শুনানির জন্য ৯ ডিসেম্বর নোটিশ দেওয়া হয়।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) শুনানি শেষে আবার বায়ু দূষণের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (কারিগরি) মুক্তাদির হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তভঙ্গ করে মানমাত্রা বহির্ভূত অপরিশোধিত বায়ু ছেড়ে পরিবেশ দূষণের দায়ে ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস কর্তৃপক্ষকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হলে তারা এসপিএম নিয়ে কাজ করে। আগের চেয়ে উন্নত হলেও এখনও এসপিএম-এর মাত্রা মানমাত্রা বহির্ভূত। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে আবারও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় পরবর্তীতে আবারও একইরকম হলে প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশগত ছাড়পত্র বাতিল করা হবে।’

এ বিষয়ে ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিমিটেড কোম্পানির কো-অর্ডিনেটর এন্ড হেড অব এডমিন শাহ নুর আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানমাত্রা বহির্ভূত বায়ু ছেড়ে পরিবেশ দূষণের দায়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে একবার জরিমানা করা হয়েছিল। তখন আমরা এ নিয়ে কাজ করি। কিন্তু এখনও পুরোপুরি না হওয়ায় আবারও জরিমানা করা হয়েছে। একইসাথে আমাদের পরিবেশের ছাড়পত্রের মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার জন্যও আবেদন করেছি। যাতে পরবর্তীতে এমন না হয়।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!