নাছিরের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন মেয়র রেজাউল

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে চট্টগ্রামের ক্ষতি করা হয়েছে মন্তব্য করেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘বিপ্লব উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক স্থানকে দোকান বসিয়ে এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ইজারাদাররা সেখানে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করলেও বছরে মাত্র লাখ টাকার জন্য এই মহামূল্যবান স্থান ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। আমি ওখানের ব্যবসায়ীদের বলেছি, ব্যবসা করতে হলে বিপ্লব উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের জাদুঘর গড়ে তুলতে হবে। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কর্পোরেশনের ভূমি ইজারা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’

রোববার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচিত ষষ্ঠ পরিষদের ২৭তম সাধারণ সভায় এসব মন্তব্য করেন মেয়র রেজাউল।

হীনস্বার্থে দখল-দূষণে ভুগতে থাকা চট্টগ্রামের নাগরিকদের জীবনমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এই সংকট সমাধানে বিভিন্ন সেবা সংস্থা আর নাগরিকদের মধ্যে সমন্বয় আর পারস্পরিক সহযোগিতা চান মেয়র।

সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট চট্টগ্রামের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। এর আগে নগরীর বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সংকট ও নিম্নমান নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন চসিকের কাউন্সিলরবৃন্দ। জবাবে ওয়াসাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের গৃহীত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

এসময় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, বন-পাহাড়-নদী-সমুদ্র নিয়ে প্রকৃতির রাণী চট্টগ্রাম। তবে আমরাই সুন্দর চট্টগ্রামকে হীনস্বার্থে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছি। আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়ন নিয়ে ভাবছি কিন্তু, নাগরিকদের জীবনমান বিশেষ করে অবসর বিনোদন আর পরিবেশের ভারসাম্যের কথা ভাবছি না।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ওয়াসার লবণাক্ত পানি সরবরাহের ফলে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সবাই ওয়াসার সামর্থ্যরে ঘাটতির কথা বলছে কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ সময়ের অনাবৃষ্টি, কাপ্তাই লেকে পানি শুকিয়ে গিয়ে শ্যাওলার জন্ম আর কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে নোনা পানির প্রবেশের কারণেই যে ওয়াসার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে তা নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। পরিবেশ সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেবল সরকারি উদ্যোগ নয় সাধারণ মানুষেরও কিন্তু চট্টগ্রামকে পরিত্যক্ত নগরী হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে কাজ করতে হবে।’

সংকট সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা কেবল অভিযোগ করব, শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অথচ তাদের জন্য খেলার মাঠ রাখবনা তাহলেতো কোন সমাধান হলো না। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। যাতে শিশুরা খেলতে পারে, বয়স্করা অবসরে হাঁটতে পারে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও রেলওয়েকে তাদের ভ‚মিতে খেলার মাঠ ও পার্ক করার জন্য আমাদের দিতে প্রস্তাব দিয়েছি।’

মেয়র বলেন, ‘মেয়রের পদে বসেই আমি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আগ্রাবাদ ঢেবা ও পাহাড়তলী জোড় ঢেবার সৌন্দর্যবর্ধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দিতে বলি, তবে রেল কর্তৃপক্ষ সহায়তা না করায় সে পরিকল্পনা ভেঙে যায়। আমি বলেছি, ভূমির মালিকানা সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে না। আমাকে শুধু ভূমি দিন আমি কর্পোরেশনের অর্থে পার্ক-মাঠ গড়ে দেবো, শিশুদের ভবিষ্যৎ বাঁচাবো। রানীর দিঘীকে দখলের হাত থেকে বাঁচানো গেলেও, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে।’

নিজস্ব অর্থায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘নাগরিক সেবা প্রদানকে গতিশীল রাখতে আমি সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় দিয়ে আন্দরকিল্লায় পুরাতন ভবনের স্থলেই ২১ তলা ভবন নির্মাণের কাজ মে মাসেই শুরু করব।’

এ সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জেলা প্রশাসকের কাছে কুলগাঁও বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ওয়ার্ডগুলোতে খাসজমি পুনরুদ্ধার করে বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণসহ চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা চান।

সভায় মেয়র নগরীর নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে হকারদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা দোকান উচ্ছেদ, বহদ্দারহাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত রিক্সা চলাচল বন্ধ, নগরীর ফ্লাইওভারের নিচে এবং অন্যান্য উপযুক্ত স্থানে সড়কসমূহে পে-পার্কিং চালুকরণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন।

সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

আরএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!