‘জিনে মেরেছে’/ গোপনে ৫ সন্তানের জননীর লাশ দাফন বাঁশখালীতে

হত্যার পর ‘জিনে মেরেছে’ বলে গোপনে আরফা খাতুন (৩৬) নামের ৫ সন্তানের জননীর লাশ দাফন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নৃশংস এ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৩ জুলাই) গভীর রাতে বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া গ্রামে। গোপনে গৃহবধূর লাশ দাফনের পর গভীর রাতে গ্রামজুড়ে স্বামীর হাতে ওই গৃহবধূ হত্যার প্রচার ছড়িয়ে পড়ে।

গৃহবধূর স্বামী মোক্তার হোসেন গৃহবধূ আরফা খাতুনের ভাই মো. হাশেমের স্ত্রী বেবি আক্তার হত্যামামলারও আসামি। সর্বত্র খুনের খবর ছড়িয়ে পড়লেও প্রভাবশালীরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়।

আরফা খাতুন গভীর রাতে ‘জিনের প্রভাবে’ পুকুরে ডুবে মরেছে বললেও ওই ছোট ডোবাপুকুরে মাত্র একজন প্রাপ্তবয়স্কের কোমরসমান পানি রয়েছে। অপরদিকে বিস্ময়করভাবে ওইদিন রাত একটায় স্বামী মোক্তার হোসেন ঘর থেকে বের হয়ে সকাল পর্যন্ত আর ঘরে ফেরেননি।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ১৮ বছর আগে খানাখানাবাদ ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রেমাশিয়া গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে মোক্তার হোসেনের সঙ্গে একই গ্রামের মৃত ইসমাইলের কন্যা আরফা খাতুনের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের কাউছার (১৭), আনছার (১৪), আকি সুলতানা (১২), আকিব উদ্দিন (৭) ও নাজিয়া সুলতানা (২) নামের ৫ সন্তানের জন্ম হয়। মোক্তার হোসেন মাছ ধরার নৌকায় চাকরি করেন। গত ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আরফা খাতুনের ভাই মো. হাশেমের স্ত্রী বেবী আক্তার খুন হয়। ওই খুনের সঙ্গে মোক্তার হোসেনও জড়িত থাকায় তাকে ওই মামলায় তিন নম্বর আসামি করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে মোক্তার হোসেন ও আরফা খাতুনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো।

শনিবার (১৩ জুলাই) রাত একটায় মোক্তার হোসেন বাড়ির সবার অজান্তে ঘর থেকে বের হয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। সকালে বাড়ির সবাই ঘুম থেকে জেগে ঘরের পেছনে লাগোয়া ডোবা পুকুরে দেখতে পায় আরফা খাতুনের লাশ ভাসছে। ওই পুকুরে পানির পরিমাণ ছিল মাত্র একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কোমর পরিমাণ। জানা যায়, আরফা খাতুন ছোট বেলা থেকেই সমুদ্রের লোনা পানিতে সাঁতার কেটে বড় হয়েছে। ওই পানিতে ডুবে মরার কোন সম্ভাবনা তার নেই। সকালে আরফা খাতুনের লাশ উদ্ধারের পর স্বামী মোক্তার হোসেনসহ পরিবারের সবাই প্রচার করতে থাকে জিনের আছরে আরফা পানিতে ডুবে মারা গেছে। সঙ্গে প্রভাবশালী একটি মহল যুক্ত হয়ে গোপনে রোববার (১৫ জুলাই) সকাল ১১টায় লাশ দাফন করে ফেলে।

আরফার স্বামী মোক্তার হোসেন বলেন, ‘শনিবার রাত একটায় আমি জরুরি কাজে ঘর থেকে বের হই। ওই সময় আরফা ঘুমিয়ে ছিল। সকালে এসে শুনি, লোকজন বলছে রাতের অন্ধকারে জিনে আরফাকে মেরেছে। আরফার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ ছিল না।’

আরফার শ্বাশুড়ি শামসুর নাহার ও শ্বশুর আব্দুল আলী বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশির জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে। তারা প্রচার করছে আরফাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, গভীর রাতে ঘর থেকে বের হলে আরফাকে ‘জিন’ পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে। এর আগেও আরফাকে জিন আক্রমণ করে হাত ভেঙে দিয়েছিল। মরার আগে পর্যন্ত সেই চিকিৎসা চলেছিল।’

আরফা খাতুনের ভাই ছৈয়দ আহমদ বলেন, ‘প্রভাবশালীদের কারণে মুখ খুলতে পারছি না। আমার বোনকে তার স্বামী মোক্তার হোসেন কৌশলে হত্যার পর জিনে মেরেছে বলে গোপনে লাশ দাফন করেছে। মোক্তার হোসেন এর আগেও আমার ভাইয়ের স্ত্রীকে হত্যা করেছিল। আমি আরফা হত্যার বিচার চাই।’

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘প্রেমাশিয়া গ্রামে গৃহবধূ মৃত্যুর কোনো অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন বলেন, ‘সকালে গৃহবধূর লাশ পুকুরে পাওয়া গেছে। রাতের যেকোন সময় তার মৃত্যু হয়েছে। বলতে গেলে এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু। এ মৃত্যুর রহস্য জানতে অবশ্যই ময়নাতদন্ত করা উচিত ছিল। গোপনে লাশ দাফন করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি আমিও ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করব।’

ইউবি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!