ছয় দিন ২৪ ঘন্টাই চট্টগ্রাম মেডিকেলের নিউরোমেডিসিনে রোগী ভর্তি করানো হবে

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের রিপোর্টের পর এলো নতুন সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ট্রোকসহ গুরুতর রোগীদের অন্যতম ভরসাস্থল নিউরো মেডিসিন বিভাগে এখন থেকে ২৪ ঘন্টাই জরুরি রোগী ভর্তি করানো হবে। আগে জরুরি রোগী ভর্তি করানো হতো কেবল সকাল ৮টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন সপ্তাহের ছয়দিনই এ ওয়ার্ডে ২৪ ঘন্টা জরুরি রোগী ভর্তি করানো হবে। তবে চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে এই সিদ্ধান্তে তেমন কোনো সুফল মিলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চট্টগ্রাম মেডিকেলে সময়ক্ষেপণে গুরুতর রোগীদের বাঁচানো যায় না, চিকিৎসা শুরু হয় দুই থেকে চার দিন পর’ প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির রোববারই (১৩ ডিসেম্বর) ১৮ নং ওয়ার্ডের নিউরো মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. হাসানুজ্জামানকে এক চিঠিতে নির্দেশ দিয়েছেন, সপ্তাহের ছয়দিন ২৪ ঘন্টাই এ ওয়ার্ডে জরুরি রোগী ভর্তি করাতে।

কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব না বলে মনে করছেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। কারণ এই ওয়ার্ডে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইইজি, এনসিএস, ইএমজি যন্ত্রপাতি ছাড়াই হাতেকলমে জ্ঞান অর্জন না করেই এমডি বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ নং নিউরো মেডিসিন ওয়ার্ডে মৃগী রোগী, অজ্ঞান বা অচেতন রোগী, ব্রেনের ইনফেকশন, স্নায়ু রোগী, মাংস দূর্বলতা রোগী, অস্বাভাবিক নড়চড়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া এখানে ৮ বেডের একটি স্ট্রোক ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু যে সময়ের মধ্যে দ্রুত সেখানে স্ট্রোকের রোগী ভর্তি হওয়ার কথা, ঘাটের পর ঘাট পেরিয়ে দীর্ঘ সময় পার করে সেখানে রোগীরা আসে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পর। এ কারণে স্ট্রোক ইউনিটের চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ থাকে না।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো ব্যক্তির হাত-পা অবশ বা প্যারালাইজড মনে হলে, ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক করে ফেললে দুই ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে চলে আসতে হবে। তারপর এক ঘন্টার মধ্যে সিটি স্ক্যান, আনুষঙ্গিক সব পরীক্ষা শেষ করে তাকে ‘থ্রমবোলাইসিস’ ইনজেকশন পুশ করতে হবে। কিন্তু স্ট্রোকের রোগীকে ৩ ঘন্টা কেন ৫ ঘন্টা পরও এই ইনজেকশন পুশ করা হয় না। কারণ ইনজেকশনটির দাম ৪০ হাজার টাকা। এ ইনজেকশন যথাসময়ে পুশ করা হলে রোগীর আগের অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই ২৪ ঘন্টার জরুরি রোগী ভর্তির ঘোষণা নামমাত্রই থেকে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

২৪ ঘন্টার জরুরি রোগী ভর্তি হলেও সেবা না পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ ওয়ার্ডে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। কোন সহকারী রেজিস্টার নেই। নেই ইনডোর মেডিকেল অফিসারও।

ওয়ার্ডে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন বিভাগীয় প্রধান একজন অধ্যাপক এবং তিনজন সহকারী অধ্যাপক। সহকারি রেজিস্টার প্রয়োজন তিনজন। অন্তত ৬ থেকে ৭ জন আইএমও বা ইনডোর মেডিকেল অফিসার দরকার। ৭ থেকে ৮ জন এমডি শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে এ ওয়ার্ডের চিকিৎসা কার্যক্রম। কিন্তু সেই এমডি শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না হাতেকলমে কাজ শেখার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

জানা গেছে, এমডি শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ডে প্রশিক্ষণকালীন সময়ে দরকার ইলেক্ট্রোএনসেফ্লোগ্রাম (ইইজি), ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (ইএমজি), স্নায়ুপ্রবাহ গবেষণা (এনসিএস) যন্ত্রপাতি। আর এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও এসবের মাধ্যমে জ্ঞানদান ছাড়াই এমডি শিক্ষার্থী তার শিক্ষাকালীন সময় পার করে চলে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে রোগীরা পাচ্ছেন না ফলপ্রসূ সেবা। আর এ ওয়ার্ডে রয়েছে ৫২টি সিট। কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী।

১৮ নম্বর নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি হাসপাতালের পরিচালক থেকে চিঠি পেয়েছি ২৪ ঘন্টাই জরুরি রোগী ভর্তি করাতে। কিন্তু ওয়ার্ডে যে সমস্যা রয়েছে লোকবল ও যন্ত্রপাতির তা সমাধান না হলে কোন উদ্যোগই আলোর মুখ দেখবে না।’

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!