ছাত্রশিবিরের ‘সেইফহোম’ ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ সিলগালা

চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের পাশে অবস্থিত ‘ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ’র দু’তলা অফিস। নিচে দোকান ভাড়া দেওয়া হলেও দ্বিতল ভবনেই চলতো কার্যক্রম। তবে সমাজকল্যাণের নাম থাকলেও মূলত কাজ চলতো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত এবং অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরের।

ছাত্রশিবির অধ্যুষিত চকবাজার এলাকায় শিবিরের তাণ্ডব বা সাংগঠনিক সভাও হতো এই অফিসে। যদিও অবৈধভাবে দখল করে থাকা এই ভবনটি নিজেদের কব্জায় নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের অফিসটিতে অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করা হয়। এই সময় অফিসের ভেতর থেকে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর লেখা বই, জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক নথিপত্র ও বিভিন্ন ব্যানার উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (৩০ মে) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানের বিষয়ে তিনি জানান, ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদে নিজেদের কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক দোকান ভাড়ায় দিয়েছিল। আমরা অভিযান চালিয়ে কার্যালয় থেকে সকল মালামাল জব্দ করে জেলা প্রশাসনের ব্যানার টাঙিয়ে দিই। ভবনটিও সিলগালা করা হয়েছে।

জানা গেছে, মানবতাবিরোধী কাজে জড়িত বিভিন্ন বক্তাদের দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠে বিতর্কিত মাহফিল আয়োজন করতো এই সমাজকল্যাণ পরিষদ। এমনকি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধী থেকে ধর্মীয় সুবক্তা বানানোর নেপথ্যেও ছিল এই সংগঠনটি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতক জমি ইজারা নেয় সংগঠনটি। পরবর্তীতে এর আশপাশে আরও কিছু জায়গা দখল করে সেখানে করা হয় দ্বিতল ভবন। যার নিচতলায় দোকান ও উপরে নিজেদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করতো তারা। নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে জায়গাটিতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখে তারা। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে আর খাজনা না দেওয়ায় বেহাত হয়ে যায় অফিসটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবিরের ‘সেইফহোম’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই অফিস।

যদিও চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের পতাকা তোলার পর তাদের কার্যক্রমে ভাটা পড়তে থাকে। অনিয়মিত হতে থাকে সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যক্রম। সর্বশেষ ২০২০ সালের পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় অফিস রুমটি।

এর আগে সরকারবিরোধী কাজ ও শিবির তোষণের অভিযোগ এনে ২০১৭ সালে সংগঠনটির অফিসে ভাঙচুর ও তালা মেরে দেয় চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই সময় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কমিশনারকেও লিখিতভাবে জানানো হয় সমাজকল্যাণ পরিষদের বিষয়ে। যদিও তখন কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না প্রশাসনের।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই এই অফিসটি বন্ধের আবেদন জানিয়ে আসছি। কিন্তু বন্ধ করতে পারিনি। এটি ছিল চকবাজার এলাকার শিবির ক্যাডারদের আঁতুরঘর। এখান থেকেই চট্টগ্রামে শিবিরের নাশকতা ও সরকারবিরোধী নীল ছক আঁকা হতো। শেষ পর্যন্ত এই অফিসটি বন্ধ হওয়ায় স্বস্তিবোধ করছি।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!